বই উৎসব যথাসময়েই করতে হবে
বিনামূল্যে বই পাওয়ার উৎসব ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি নববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ফুলের ঘ্রাণের মতো শিক্ষার্থীদের মনে দোলা দেয়। তাছাড়া এ উৎসবের মধ্যে সর্বজনীনতাও রয়েছে। কেননা ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে এই বই ধনী-দরিদ্র সবাই পেয়ে থাকে; কিন্তু আগামী ১ জানুয়ারিতে সর্বজনীন এই বই উৎসব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গণমাধ্যমে এসেছে, আগামী বছরের জন্য ৪০ কোটি নতুন বই ছাপাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অথচ বছর শেষ হতে আর মাত্র ২ মাস বাকি থাকলেও এখনো ছাপানোর কাজই শুরু হয়নি। এমনকি শেষ হয়নি মাধ্যমিকের দরপত্রের প্রক্রিয়াও। মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থায় মার্চের আগে সব বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করা হয়। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই ছাপানো হবে। সেইসঙ্গে বই পরিমার্জনেরও সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে পরিমার্জনের কাজ শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। আর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় বইয়ের সংখ্য বেড়েছে ৯ কোটি। অন্যান্য বছর জুলাইয়ে বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বই দেয়া সম্ভব হয় না। অথচ এ বছর এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের বইয়ের দরপত্রই দেয়া হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন বই ছাপানোর যে প্রক্রিয়া তা সম্পন্ন করতে প্রশাসনের যে গুরুত্ব প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত কেন? এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ধীরগতির জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
যদিও অতীতে বই বিপণন করা নিয়ে নানা ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে প্রকাশকরা নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে ব্যর্থ হতেন। পাঠ্যপুস্তকে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এবং ছাপা ছিল অস্পষ্ট। আবার দেখা যেত বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি হতে।
২০০১ সালে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ও বই ছাপার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অসততার কারণে যথাসময়ে বই ছাপা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ওই বছর শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে বই পায়নি। এসব সমস্যার সমাধানে সরকার ২০০৯ সালে বিনামূল্যে বই বিতরণের উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমবারের মতো এই উৎসব হয় ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি। সেই থেকে সরকার সাফল্যের সঙ্গে বই বিতরণের উৎসব পালন করে আসছে। যদিও করোনা মহামারির জন্য ২০২১ সালে বই উৎসব হয়নি।
অন্যদিকে এনসিটিবির বইয়ের জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ দরকার। এই কাগজ তৈরির জন্য মূল উপাদান (পাল্প) বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; কিন্তু সরকার যদি দেরি করে সম্মতিপত্র দেয়, তাহলে সময়মতো বই ছাপা কঠিন হয়ে যাবে।
এমতাবস্থায় আগেভাগেই ভাবতে হবে, আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন, সেই কাগজ দেশে মজুত আছে কি না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলব, কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ বাংলাদেশে বইয়ের সবচেয়ে বড় গ্রাহক তারা।
তাই সংশ্লিষ্টদের বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাতে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হয়। কারণ কোনো ধরনের গাফিলতি ও অস্থিরতার কারণে ধারাবাহিক বই উৎসব ব্যাহত হওয়া কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যর্থতার কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। তাই এসব সমস্যা ও সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে আগেভাগে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বই উৎসব যথাসময়েই করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে