ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে মোট কতজন আহত-নিহত হয়েছেন, তার সঠিক তালিকা এখনো পাওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা হাজারের ওপর এবং আহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার প্রায়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। কারণ আহতদের অনেকের অবস্থাই এখনো আশঙ্কাজনক। কারও শরীর দগ্ধ হয়ে গেছে, কারও চোখে গুলি, কারও হাত কেটে ফেলতে হচ্ছে, কারও পা। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই গুরুতর আহত। তাদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার।
গত রোববার (১৮ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে, এ তথ্য যে হালনাগাদ নয়, অনেক আহত মানুষের কথা স্বাস্থ্য বিভাগ জানে না, এ কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন আহতদের স্বজনরা। আহত-নিহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার।
সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনো যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের জন্য বিশেষ ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে; কিন্তু আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। আহতদের পরিবারগুলো বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে।
আহতদের ছাত্র-জনতার মধ্যে অনেকেই বেশ নিম্নআয়ের পরিবারের মানুষ। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা খরচ জোগানোর তাদের নেই। এই নিয়ে তারা দারুণ অনিশ্চতা বোধ করছেন। কীভাবে কতদিন পর্যন্ত সরকার আহতদের চিকিৎসা ব্যয় চালাবেন এ বিষয়ে এখনো কোনো সঠিক সুরহা হয়নি। অনেক চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের অনেকের জীবনভর কিছু না কিছু জটিলতা থাকবে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। সেরকম হলে অবশ্যই বেশ ব্যয়সাধ্য বিষয় হবে।
সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আহতদের জীবনভর চিকিৎসার নীতিমালাও এখনই গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, একটি নতুন বিষয় সামনে এলে পুরোনো বিষয় ঢাকা পড়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের প্রতি এখনো গণমানুষের আবেগ আছে বলে কথাবার্তা হচ্ছে, দেখা যাবে মাস কয়েক পরেই হয়তো এই আলোচনা থেমে যাবে। এখনই দেখা যাচ্ছে কে কোন পদে বসবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। আরও নানা ইস্যু আসবে।
দেশে এখন প্রতি মুহূর্তেই নানা আলোচনার বিষয় আসবে; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের যেন কোনোভাবেই আমরা ভুলে না যাই। তাদের রক্তের বিনিময়েই বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা চাই, দগদগে ঘা থাকতেই যেন সরকার তাদের সমস্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে। গণঅভ্যুত্থানে আহত একজনও বিনা মূল্যে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারেরও দেখাশোনার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে