Views Bangladesh Logo

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করুন

কিছু দিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরজুড়েই চলছে গ্যাসসংকট। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। লোডশেডিং ও গ্যাসসংকট বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। রাজধানীতে কোনো কোনো এলাকায় প্রায় সারা দিনই গ্যাসের চাপ কম থাকে। নিবু নিবু চুলায় রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বাধ্য হয়ে রাত জেগে রান্না করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণ এবং এর থেকে প্রতিকারেরও কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় মাস ধরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কম। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে আরেক দুর্ঘটনায় পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। এতে জাতীয় গ্যাসের গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ আরও কমে গেছে। গ্যাস সংকটে পড়েছে শিল্প, আবাসিক ও বিদ্যুৎ খাত। একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গত বুধবার থেকে বেড়ে গেছে লোডশেডিং।

গ্যাসের সরবরাহ কমায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রান্নার চুলা জ্বালাতে হিমশিম খাচ্ছেন গ্যাসের গ্রাহকরা। শিল্পকারখানায় আগেই উৎপাদন কমে এসেছিল গ্যাসের অভাবে। এখন কারখানা চালাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। গতকাল বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। গ্যাস থেকে দিনে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। গতকাল বিকেলে এটি ৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। এতে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়; কিন্তু বাড়তি অর্থ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর ওপর ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাসসংকট। এমনিতেই গরমের দিনে টেকা দায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যেমন জোর দেয়া হয়েছিল, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

১৫ বছর আগেও যেখানে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতো, এখনো তাই হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখনো তা বন্ধই আছে; কিন্তু গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এখন উচ্চ দামে এলএনজি আমদানি করে জাতির ঘাড়ে দায় চাপানো হচ্ছে। তাই ঠিকমতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা গেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হবে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিতে পারে।

দুই বছর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছিল। ওই সময় দেশে সূচিভিত্তিক লোডশেডিং চলছিল। তারপর বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। আর এভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি পরিবারের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ থেকে উত্তরণের পথ হলো দেশি কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা। পাশাপাশি স্থল ও সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

সে ক্ষেত্রে আগে থেকে পদক্ষেপ নেয়া হলে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হতো না। পাশাপাশি শিল্পকারখানায়ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা যেত। সাশ্রয় হতো বৈদেশিক মুদ্রা। তাই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের ওপর নির্ভর জ্বালানি নীতি থেকে দেশেকে বের করে আনার জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ