বৈরী আবহাওয়ায় শিশুদের বিঘ্নিত পড়াশোনা নির্বিঘ্ন করুন
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের কারণে যতগুলো দেশে সবচেয়ে মারাত্মক বৈরী প্রভাব পড়ছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শুধু কৃষিতে, স্বাস্থ্যে, বাসস্থানে নয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে আমাদের দেশের শিশুদের পড়াশোনারও চরম ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি আরও অনেক দেশের শিশুদেরই হচ্ছে, তবে আমাদের দেশের শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি। চরম আবহাওয়ায় ২০২৪ সালে ২৪ কোটি শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে। আর ক্ষতির শিকার হওয়া এ শিশুদের সাড়ে ৩ কোটিই বাংলাদেশের।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের এটি (স্কুলশিশুদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটা) উপেক্ষিত বিষয়গুলোর একটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার যে বিষয়গুলো স্কুলশিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হলো তাপপ্রবাহ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল সতর্ক করে বলেন, চরম আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ‘অধিকতর ঝুঁকিতে’ আছে শিশুরা।
শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশের বিশাল সংখ্যক শিশু যদি এরকম ঝুঁকিতে পড়ে যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? গত গ্রীষ্মকালেও আমরা দেখলাম প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে অনেক স্কুল দিনের পর দিন বন্ধ রাখতে হয়েছে। তাপপ্রবাহে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তেমন বায়ু চলাচলের পথ খোলা নেই। স্কুলের সামনে মাঠ নেই। আশপাশে গাছ নেই। চারদিকই বদ্ধ। শ্রেণিকক্ষগুলোতে ধারণক্ষমতার অধিক শিক্ষার্থী পরিবেশ আরও খারাপ করে তোলে। ফেনের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। অনেক ফোন ঠিকমতো চলে না এরকম অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় শিশুদের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু দুঃখের বিষয়, শত অভিযোগ সত্ত্বেও পরবর্তীতে স্কুলগুলোর পরিবেশ উন্নয়নের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও নিশ্চয়ই সরকার চুপ করে থাকবে। অনেক স্কুল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। আগামী বছরও আমরা একই অবস্থা দেখব; কিন্তু আমাদের শিশুদের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলার অধিকার তো কারও নেই। এ ব্যাপারে এখনই সরকারকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে। সচেতন হতে হতে প্রতিটি শিশুর অভিভাবকদের।
এর সঙ্গে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর বিষয়ে বিশ্বের সব রাষ্ট্র-সরকারকেই একযোগে কাজ করতে হবে। এটা কোনো নির্দিষ্ট দেশের একার সমস্যা না। এটা সবার সমস্যা, পুরো পৃথিবীর সমস্যা। সারা পৃথিবীর সব রাষ্ট্র মিলিয়েই পৃথিবীকে আজকে নরকে পরিণত করেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী উন্নত রাষ্ট্রগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দশকের পর দশক জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মানুষের নানারকম কর্মকাণ্ড এই পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলেছে ও আবহাওয়ার রূপ বদলে দিয়েছে।
এখন, এই জলবায়ু পরিবর্তন রোধেও উন্নত দেশগুলোকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমরা যে চরম ভুক্তভোগী, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারেও উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পড়াশোনায় যেন কোনো বিঘ্ন না হয় তার জন্য আমাদের সরকারকে এখনই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে