Views Bangladesh Logo

বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করুন

দিন ধরে তীব্র লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। অনেক এলাকায় দিন-রাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ব্যাহত হচ্ছে অফিস-আদালতের কাজকর্ম। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা, বিদ্যুতের অভাবে শিশুরা ক্লাসে বসতে পারছে না। বিদ্যুতের অভাবে সারা দেশেই নেমে এসেছে এক অস্থিরতা ও স্থবিরতা।

আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ চরমে, অন্য দিকে দেশের অর্থনীতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও দিনের বেলা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না; কিন্তু কেন হঠাৎ লোডশেডিং? বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল তিন মাস ধরে বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। এতে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বকেয়ার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও কম হচ্ছে। এসব কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

সূত্রমতে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ১৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৪৪৪ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৯ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য গ্যাস প্রয়োজন ২২০ কোটি ঘনফুট। ১৩০ কোটি ঘনফুট হলে পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দেয়া যায়; কিন্তু সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়ায় দিনে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ৬০ কোটি ঘনফুট। গতকাল বিদ্যুতে গ্যাস দেওয়া হয় ৮৫ কোটি ঘনফুট।

গ্যাস সরবরাহ না থাকায় জ্বালানি তেল দিয়ে উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় খুলনায় বন্ধ রয়েছে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে উৎপাদন হচ্ছে না প্রায় ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট থেকে ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ২৮ আগস্ট থেকে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আর ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের বিলের ৮০০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন গৌতম আদানি।

গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করায় ঋণদাতারা আমাদের ওপর কঠোর হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত ছাড় করতে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বিলগুলো নিয়মিত এবং এখনকার পাওনাগুলো প্রতি মাসের বিলের সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ করছি।’ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়বে।

বেশ দীর্ঘস্থায়ী এক সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন; কিন্তু এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে দেশের অর্থনীতিসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে হবে। এর মধ্যে অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সাধারণ মানুষ যুক্তিতর্ক বা বাস্তব পরিস্থিতি বুঝেন না। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যে করেই হোক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে এও বুঝতে হবে, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে অল্প দিন হয়। এখনো তারা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো সাজাতে পারেননি। আগের সরকারের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি এখনো বহাল। সব মিলিয়ে দেশের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে জনসাধারণকে একটু দৈর্যও ধরতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ