দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
দেশে হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে ডাকাতি-অপহরণ। গতকাল (৪ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত ১৪ মাসে শিশুসহ ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। ঢাকাসহ সারা দেশেই এসব অহরণের ঘটনা ঘটছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নানা ছদ্মবেশে অনেক সংঘবদ্ধ চক্র অপহরণের মতো অপরাধে সক্রিয়। অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেলে অপহৃতের ওপর নির্যাতন চালায় তারা। এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের ঘটনায় সারা দেশে পাঁচ শতাধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে। গত বছর অপহরণের শিকার ৬৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে একের পর এক শিশু অপহরণের ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাইমারি ও হাইস্কুল এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশাসন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। মুক্তিপণ না পেলে তাদের হত্যাও করা হয়। বোরকা পরে শিশুদের অহরণ করা হচ্ছে।
এতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে দেশের মানুষ। পুলিশ ও র্যাব সূত্র বলছে, ঈদ সামনে রেখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারীদের তৎপরতা বেড়েছে। অপহরণের পাশাপাশি বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও। ঈদের ছুটিতে মানুষ বাড়ি যাবে, কেনাকাটা করতে যাবে, বেড়াতে যাবে- কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কিত। ফলে ঈদ আনন্দের নাম হয়ে উঠছে আতঙ্কের নাম।
অন্যদিকে বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে ও বুধবার (৩ এপ্রিল) ঘটেছে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা। সংবাদ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে একদল বন্দুকধারী রুমা উপজেলা কমপ্লেক্সের মসজিদ ঘেরাও করে ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে তুলে নেয় এবং এরপর ব্যাংকে তাণ্ডব চালায়। পরদিন বুধবার বন্দুকধারীরা থানচি বাজার ঘেরাও করে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা তছনছ করে এবং ব্যাংকের কাউন্টার ও উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। সশস্ত্র এ হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা (কেএনএফকে) জঙ্গি গোষ্ঠীকে। এতে ফের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য অঞ্চলে। মানুষের প্রশ্ন, পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় পাহারা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা কী করে ঘটে?
হঠাৎ করে কেন ঘটছে এসব অপহরণের ঘটনা? এর কয়েকটা কারণ সাধারণ চোখেই চিহ্নিত করা যায়- বেকারত্ব বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ইত্যাদি। আরও গভীরভাবে জানার জন্য অপহরণ মামলাগুলো নিয়ে বিশদ তদন্ত ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। কারা জড়িত এসব সংঘবদ্ধ চক্রান্তের সঙ্গে, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ এই দুর্বৃত্তরা শুধু অপহৃত ব্যক্তির ক্ষতি করছে না, আর্থিক ও মানসিকভাবে তার পরিবারেরও ক্ষতি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। এসব রুখে দেয়ার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পাশাপাশি সবার সাবধান হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের নজরে রাখতে হবে। বেশির ভাগ অপহরণের ঘটনাই ঘটেছে শিশুদের ক্ষেত্রে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে