বিজয় দিবসের তাৎপর্য অক্ষুণ্ণ থাকুক
আজ মহান বিজয় দিবস। বিজয় দিবস উপলক্ষে সব শহীদের প্রতি ভিউজ বাংলাদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যারা বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলেন, আমাদের নতুন একটি দেশ উপহার দিয়েছিলেন, আমরা কোনোদিন তাদের ভুলব না।
কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ আজ নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর ভাষায় বলতে হয়, 'জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন'।
একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে বাতিল করতে গিয়ে আজ আরেকটি বিশেষ রাজনৈতিক দল জাতির গৌরবের ইতিহাস মুছে দিতে চাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই কতিপয় ব্যক্তি-গোষ্ঠীর রাজনৈতিক তৎপরতা, কথাবার্তা নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের সচেতন নাগরিকরাও এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন।
এবারের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসও তেমন মর্যাদার সঙ্গে উদযাপিত হয়নি। ঢাকার বেশ কিছু রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে এদিন অন্য বিষয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে এবং সেই অনুষ্ঠানেও একটিবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়নি। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষেও তেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই। রাষ্ট্রীয় কিছু অনুষ্ঠান আছে নিয়মমাত্র। কোথাও যেন প্রাণছন্দ নেই, তেমনটি অনুভব করছে দেশের মানুষ।
সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সূচি প্রকাশ। পোস্টারে লেখা রয়েছে- `ডিসেম্বর উৎসব'। বিজয় উৎসব নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বয়ে গেছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন ডিসেম্বর উৎসব! বিজয় উৎসব কেন নয়?
আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ কারও দয়ায় পাওয়া নয়। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ছিল দীর্ঘদিনের ত্যাগ-তিতিক্ষা। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কূটপ্রচারণায় তা ব্যর্থ হতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো বিশেষ দলের নয়। মুক্তিযুদ্ধের পেছনে সব মানুষেরই অবদান ছিল।
মূলত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটা জনযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী থেকে আলাদা হওয়ার বিষয় ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের অন্তিম লক্ষ্য ছিল ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ প্রাপ্তি। দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা অর্জিত হয়নি। তাই নতুন এক গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা এই গণজাগরণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরাও চাই মানুষ তার হারানো অধিকার ফিরে পাক। মানুষ ভোটের অধিকার পাক, ভাতের অধিকার পাক। দেশে যেন এক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কোনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নামে কোনো বিশেষ পক্ষ দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এটা এ দেশের জনগণ কোনোদিনই মেনে নেবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে আমরা এক পাও সামনে এগোতে পারব না। আমাদের জাতির হাজার বছরের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য দিয়েই গাথা হয়েছে। তাই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, আমাদের বিজয়ের গান গাইতেই হবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের সবারই দায়িত্ব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে