মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি
কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরই) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। সহ-আয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ আইন বিষয়ক সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।
সংবাদ সম্মেলনে বিডব্লিউজিইডি-এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, বিতর্কিত আইনের আওতায় বাতিল হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের এই চুক্তি পুরোপুরি অনৈতিক ও অবৈধ। এ চুক্তির মাধ্যমে জনগণের ওপর অতিরিক্ত ৩,০৫৯ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি জানান, বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয় ওরিয়ন গ্রুপকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ ঢাকা লিমিটেডের মধ্যে একটি বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি আরও জানান, ওই চুক্তি অনুযায়ী, স্বাক্ষরের ৪৫ মাসের মধ্যে বা ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতেই পারেনি, এমনকি নির্মাণকাজও শুরু করেনি। ফলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি প্রকল্পটি মাতারবাড়ি এলাকায় স্থানান্তরের সুপারিশ করে এবং পাশাপাশি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, একাধিকবার সময়সীমা পরিবর্তনের পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এই মেয়াদ না বাড়ালে চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যেত। বিডব্লিউজিইডির পৃষ্ঠপোষকতায় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, জ্বালানি উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরে সময় বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানানো হয়।
সরকারি তিন ব্যাংক যৌথভাবে ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর এই ঋণের বিরোধিতা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের পক্ষে মত দেন। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ঋণ বাতিল হলেও, কয়লা প্রকল্পের ঋণ এখনো বহাল রয়েছে।
হাসান মেহেদী বলেন,এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোনো ক্রমেই ২০২৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এর পরে নির্মাণ করলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া স্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহণ খাতের খরচ পরিবর্তিত হবে, যা ২০১৬ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত টাকার তুলনায় কম হওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র এ দুটি কারণেই এ বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করা দরকার।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ওরিয়ন ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংযুক্ত একটি গণআবেদন ২০২৪ সালের ৪ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পরিবেশ, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় বিডব্লিউজিইডির উদ্যেগে ওরিয়নের কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন অর্থ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সিপিজিসিবিএল-এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথক পৃথক চারটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে বলেও জানান হাসান মেহেদী।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে