ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্দেশিকা: বাধ্যতামূলক ইউএসবি-সি পোর্ট
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নতুন ইউএসবি-সি নির্দেশিকা এখন থেকে কার্যকর। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া মোবাইল ডিভাইসগুলোতে একটি অভিন্ন ইউএসবি-সি পোর্ট থাকতে হবে। ফলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিভাইস একসঙ্গে ব্যবহার করা সহজ হবে। শুধু চার্জিং মান নিশ্চিত করার জন্যই নয়, এই নির্দেশিকা ভোক্তাদের জন্য পণ্যের লেবেলিং উন্নত করে, দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তিকে একীভূত করে এবং ই-বর্জ্য কমানোর উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্যগুলো রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই পদক্ষেপ ই-বর্জ্য কমানো এবং ভোক্তাদের সুবিধা বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চার্জিং পোর্ট একরকম করার মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দৈনন্দিন প্রযুক্তি ব্যবহারে সহজতা আনার, অপ্রয়োজনীয় ব্যতিক্রমতা কমানোর এবং টেকসই ইলেকট্রনিক্সের জন্য একটি বৈশ্বিক উদাহরণ স্থাপন করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
টেকসই উন্নয়নের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপীয় কমিশন ২০২২ সালে নির্দেশ দেয় যে ২০২৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া সব মোবাইল ফোনে একটি অভিন্ন ইউএসবি-সি পোর্ট থাকতে হবে। এই নির্দেশিকা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র গ্রহণ করে। এটি শুধু মোবাইল ফোনই নয়, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, হেডফোন, গেমিং কনসোলসহ বিভিন্ন চার্জযোগ্য ডিভাইসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং এটি ১০০ ওয়াট পর্যন্ত তারযুক্ত চার্জিং সমর্থন করে।
এই নির্দেশিকা ল্যাপটপ নির্মাতাদের জন্য অতিরিক্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। তাদের ২৮ এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত, অতিরিক্ত ১৬ মাস, নতুন ইউএসবি-সি মানের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে, কিছু উচ্চ ক্ষমতার ডিভাইস, যেমন ৩৫০ ওয়াট পাওয়ার ইনপুটযুক্ত প্লেস্টেশন ৫-এর মতো ডিভাইসকে এই নিয়মের বাহিরে রাখা হয়েছে।
ড্রোন এবং ওয়্যারলেস চার্জার এই নির্দেশিকার আওতার বাইরে রয়েছে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাজারের প্রবৃত্তি এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে, যাতে আরোপিত নিয়মগুলো সময়োপযোগী থাকে। এই পদ্ধতি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবনকে সহায়তা করে।
নির্দেশিকাটি ডিভাইসগুলোর জন্য ইউএসবি চার্জিং পোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে, তবে নির্মাতারা নিজেদের আলাদা চার্জিং সিস্টেম রাখতে পারবে, যেমন ম্যাকবুকের ক্ষেত্রে দেখা যায়। ইউএসবি-সি ছাড়াই বিদ্যমান থাকা পুরোনো ডিভাইসগুলো বাজারে বিক্রি করা যাবে; কিন্তু নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ম মানতে হবে। পাশাপাশি, বিক্রেতারা নিয়মের বাইরে থাকা পুরোনো মডেলের নতুন স্টক আনতে পারবে না।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, যেসব ডিভাইসে ৫ ভোল্ট, ৩ অ্যাম্পিয়ার, বা ১৫ ওয়াটের বেশি তারযুক্ত চার্জিং প্রয়োজন, সেগুলোতে ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি (USB-PD) বাধ্যতামূলক। আইফোন এবং পিক্সেল ইতোমধ্যেই এই নিয়ম মানে, তবে ওয়ান প্লাস এবং অপ্পোর মতো ব্র্যান্ডগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের সুপার ভুক (শুপেরভোওচ) চার্জিং ইউএসবি (USB-PD) সমর্থন করে। যদিও এই ব্র্যান্ডগুলো অনেক আগেই এই মান গ্রহণ করেছে, তাই মনে হচ্ছে না যে বড় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে।
ইউরোপীয় কমিশন এখন চার্জার ছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিক্রির অনুমতি দিয়েছে, যাতে অব্যবহৃত চার্জারের বর্জ্য কমানো যায়। পুরোনো চার্জার যেগুলো সাধারণত পুনর্ব্যবহার করা হয় না, সেগুলো যাতে পুনর্ব্যবহার হয়, তা নিশ্চিত হবে। এই উদ্যোগ ই-বর্জ্য কমাতে ভূমিকা রাখবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশে ফোনের সঙ্গে আর চার্জার দেয়া হবে না। নতুন এই পরিবর্তন সহজতর করতে, পণ্যের প্যাকেটে একটি চিহ্ন থাকবে যা দেখাবে চার্জার অন্তর্ভুক্ত আছে কি না।
প্রতিটি দেশ নিজস্বভাবে নিয়মগুলো ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করতে পারবে, যাতে নিয়ম মানার ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়। যদিও এই নির্দেশিকা নির্মাতাদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি ভোক্তাদের জন্য একটি বড় বিজয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নাগরিকদের স্বার্থকে করপোরেট সুবিধার ওপরে রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই উদ্যোগটি অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি বড় উদাহরণ হতে পারে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে