Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

জাবির হোটেল ট্র্যাজেডিতে মৃত্যু

প্রিয়র ফলে কাঁদছে সবাই

Rezaul karim

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শোরে আন্দোলনমুখর ৫ আগস্টে জাবির হোটেল ট্র্যাজেডিতে শহীদ হওয়া শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। যে ফলাফলে পরিবারে উচ্ছ্বাস থাকার কথা; সেই ফল নিয়েই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

গত মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে এই মাতম ওঠে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের মাঝে। শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয় ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর সরকারি সিটি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি পেয়েছেন জিপিএ-৪ দশমিক ১০।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এই ফল জানতে পেরেছেন প্রিয়র পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় সবাই। শুধু জানতে পারেননি প্রিয়। গত ৫ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরে বিজয় মিছিলে বের হয়ে জাবির হোটেল ট্র্যাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফল করে শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দ উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত প্রিয়। প্রিয় শহরের মুজিব সড়ক এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিণী রেহেনা পারভীন দম্পতির সন্তান। প্রিয় ছাড়াও এই দম্পতির ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলেসন্তান রয়েছে।

শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় নীল রঙ করা চারতলাবিশিষ্ট একটি বাড়ির নিচতলাতে সপরিবারে ভাড়া থাকে প্রিয়র বাবা-মা। প্রিয়র বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়েই চলছে শোকের মাতম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই প্রিয়র ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুলে খুলে দেখাচ্ছিলেন প্রিয় মা রেহেনা পারভীন।

টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নানা বই নেড়ে চড়ে মুছছিলেন। এসএসসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ও ক্রেস্ট এনে ছেলের সাফল্যের গল্প শোনালেন।

রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলে যে কত ভালো। বাবা-মা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিল না। স্বপ্ন দেখত তার দুই ভাইকে মানুষ করবে, মা-বাবাকেও দেখাশোনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন! প্রিয়র পাসের খবর আমার জন্য খুশির; কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।’

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার সবই আছে, শুধু নেই প্রিয়। মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। বলবে, দেখো মা আমি পাস করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে। সবাই বলছে সে ভালো রেজাল্ট করেছে। আমার ভেতরে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না আমার বুকের ধনকে ছাড়া। সে বেঁচে থাকলে কত আনন্দ করত, খুশি হতো। তা দেখে গর্ব করতাম আমিও।’

বারবার প্রিয়র মা কান্নায় ভেঙে পড়লেও শক্ত থাকতে দেখা গেছে বাবা শাকিল ওয়াহিদকে। তিনি বারবার রেহেনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বলত বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইএল টেস্ট করব, বিদেশে যাব। সংসারটা আমিই দেখব। সঙ্গে ছোট দুই ভাইকে বড় করব।

তিনি বলেন, আমার ছেলে তো ৫ তারিখে মারা গেছে। তবে রেজাল্টটার খবর শুনে আত্মীয়স্বজন যখন ফোন দিচ্ছে; তখন বুকের ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার সন্তানের দ্বিতীয় মৃত্যু হলো। তিনি জানান, এসএসসিতে প্রিয় জিপিএ-৫ পেলে এলাকায় আধামণ মিষ্টি খাইয়েছিলাম। এবার ছেলে নাই...। আমি বুকে কষ্ট চেপে দিন পার করছি।’

প্রিয়র বন্ধুরা জানান, প্রিয় অনেক সাহসী ও পরোপকারী ছিল। তাই তো ৫ আগস্ট বিকেলে শহরের চিত্রামোড়ের ১৪ তলাবিশিষ্ট জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনালে দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলতে থাকা হোটেলে আটকে পড়াদের উদ্ধারে উঠে পড়েন। কয়েকজনকে বাঁচাতে পারলেও আটকে যান প্রিয়। জাবির ট্র্যাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন আমাদের বন্ধু ও মেধাবী এই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীরা যখন উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত প্রিয়।

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের পাঁচতারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন ২৪ জন। এর মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। আহত হন শতাধিক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ