শীতে চোখের বাড়তি যত্ন নেয়া জরুরি
অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতকালে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি, তাই এ সময় চোখের বাড়তি যত্ন নেয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, চোখ মানব শরীরের অত্যন্ত মূল্যবান একটি অংশ। সব ঋতুতেই চোখের যত্ন নেয়া উচিত। তবে অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতকালে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এতে চোখ শুষ্ক হতে পারে ও দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, শুষ্ক চোখের সমস্যায় দরকার বাড়তি যত্ন। কেননা শুষ্ক চোখের সমস্যা হলে নানা অস্বস্তিসহ জ্বালাপোড়া হতে পারে। আলো সহ্য করতে না পারা, ঝাপসা দেখা, লাল হওয়া কিংবা চোখের ভেতরে ও বাইরে পিচ্ছিল আঠালো পদার্থ তৈরি হতে পারে।
এসব সমস্যা থেকে চোখকে নিরাপদ রাখতে কয়েকটি বিষয় মেনে চললে স্বস্তি পাওয়া যাবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, চোখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চোখে ধুলাবালি জমতে দেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে বাহির থেকে এসেই ঠান্ডা পানিতে চোখ ধুইয়ে নিতে হবে। অনেকের অভ্যাস চোখে হাত দিয়ে ঘষা দেয়া। তাই এ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ অভ্যাস চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
শীতকালে এ সমস্যা বাড়তে পারে। তাই তিনি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। শরীরের পানির ঘাটতির কারণে শুষ্ক চোখের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই চোখকে আর্দ্র রাখার জন্য সবসময় বেশি বেশি পানি খাওয়ার পরামর্শসহ তরল স্যুপ খাওয়ার কথা বলেন তিনি।
তবে শুষ্ক চোখে কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে চোখে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই দিনে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি চোখে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে থাকা উচিত নয়। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারসহ ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ না রাখাই ভালো বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দৃষ্টিজনিত ত্রুটিসহ অন্ধত্ব বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। জাতীয় জরিপে উঠে এসেছে দেশে শতকরা একজন অন্ধত্বের শিকার। সেই সঙ্গে শতকরা ১৯ জনই কোনো না কোনো কারণে দৃষ্টি ত্রুটিজনিত সমস্যায় ভুগছে। এসব তথ্য সর্বশেষ জাতীয় অন্ধত্ব জরিপে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে দেশব্যাপী অন্ধত্ব জরিপটি করেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। শুষ্ক চোখের সমস্যায় ভুগছেন যারা ওমেগা সমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এই খাবারের ফলে বেশি বেশি জলীয় পদার্থ তৈরি হয়। সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা রয়েছে।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ শীতকালে অবশ্যই রোদ চশমা বা কালো চশমা ব্যবহারে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোদ চশমা শুধু গরমকালের জন্য নয়, চশমাটি শীতকালেও গুরুত্ব বহন করে। কারণ শীতকালে সূর্য্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ড্রাই আইয়ের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের ড্রপ ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
যাদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে তাদের ধূমপান কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কেননা ধূমপান শুষ্ক চোখের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সাবেক এই ভিসি আরও বলেন, মানবদেহে সংবেদনশীল অঙ্গ হচ্ছে চোখ। ভিটামিনের অভাবজনিত কারণেও হতে পারে চোখের রোগ। তাই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মধ্যদিয়ে চোখের রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তিনি বলেন, চোখের জন্য ভিটামিন এ-যুক্ত খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিম, গরুর কলিজা, ঘি, মাখন ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস। দুধ ও দইয়েও আছে প্রচুর ভিটামিন-এ এবং জিংক। জিংক লিভার থেকে চোখের রেটিনায় ভিটামিন-এ অণু পৌঁছে দিতে সহায়ক শক্তির কাজ করে।
এছাড়াও গাজর, মিষ্টি আলুতেও ভিটামিন-এ এর সঙ্গে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুই উপাদান আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন। গাজর ও দুধ নিয়মিত খেতে পারেন সব বয়সের মানুষই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে