তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্যের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন
দুদিন ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে। গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। দিনেরবেলায় রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কমে গেছে। বাড়িতে থেকেও শান্তি নেই, চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে অনেকের। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই তাপপ্রবাহ অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ দেশের যত অংশজুড়ে তাপের বিস্তার তা চলতি বছরে দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশের অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা এখন ৩৬ ডিগ্রির উপরে। এপ্রিল মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ ছিল; কিন্তু তাপপ্রবাহ এত বিস্তৃত ছিল না। গত বুধবার থেকে দেশের বিস্তৃত এলাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আজ দেশের ৪৫ জেলায় তাপপ্রবাহ চলছে। এটি চলবে আগামীকাল ও পরশু পর্যন্ত। আগামী সোমবার থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কমে আসবে। কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে আসবে।
সারা দেশের মানুষ চাতকের মতো এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়। গত সপ্তাহে কয়েকবার আকাশ মেঘলা হয়েছে, বৃষ্টির আলামত দেখা দিয়েছে, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও দেয়া হয়েছিল বৃষ্টির পূর্বাভাস; কিন্তু বৃষ্টির দেখা মিলেনি। আগামী দু-একদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে জনজীবন সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়বে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর জন্যও তা ভয়ংকর ব্যাপার হবে।
আজ বৈশাখের ২৮ তারিখ, আসছে জ্যৈষ্ঠ মাস; বর্ষা আসতে এখনো অনেক দেরি; এর মধ্যে হয়তো আরও কয়েকদফা তাপপ্রবাহ আসবে; আমরা যদি এখনই তার জন্য আগাম প্রস্তুতি না নেই, স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল না হই তাহলে হয়তো বিপদে পড়ব। সামনে ঈদুল আজহা। এবারের ঈদে ছুটিও মিলবে দীর্ঘ। শহর ছেড়ে অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাবেন। বেড়াতে যাবেন। তার জন্য আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। কোরবানির ঈদে প্রচুর মাংস খেয়েও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া কোরবানির পশু বহন করতে গিয়েও অনেকে আহত হন, ঝড়-বৃষ্টি-খড়ায় পশুগুলোও নানাভাবে কষ্ট পায়। আর দুই সপ্তাহ পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে কোরবানির পশু বিক্রির হাট। আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পশুগুলো যতটা সম্ভব যেন কম কষ্ট পায়।
আগামী অন্তত দেড় মাসের গ্রীষ্মকালীন গরমের কথা চিন্তা করে সরকারের এখনই উচিত প্রাণ-প্রকৃতির দুঃসহ যন্ত্রণা কমাতে যতটা সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঢাকার কয়েক জায়গায় অত্যাধুনিক স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে পানি ছিটাতে দেখা গেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে (ডিএনসিসি)। এরকম আরও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও সারাক্ষণ সজাগ থাকতে হবে- মশা, পানি, খাবার বা অন্যান্য কোনো কারণে যেন কোনো রোগ না ছড়ায় তার জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষেরই এ সময় নিজের ও নিজের পরিবার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। বেশি করে পানি খান। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব শীতল পরিবেশে রাখুন। আশপাশের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে খোঁজ নিন। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও দুর্ভোগে একমাত্র আমাদের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর আর আত্মসচেতনতাই আমাদের নিরাপদ রাখতে পারে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে