Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দেশের বিনিয়োগ-বাণিজ্যের পরিবেশ যে কারণে প্রতিকূল হচ্ছে

M A  Khaleque

এম এ খালেক

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

ম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বিজনেস রেডি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ মোটেও অনুকূল নয়। ফলে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে খুব একটা ভালো করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান বাস্তব পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশকে তালিকায় চতুর্থ স্থানে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। মোট ১০টি সূচক বিবেচনায় নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ ৫৩ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট লাভ করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে ধারণা দেয়ার লক্ষ্যেই এ সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বিজনেস রেডি’ সূচক নতুন কিছু নয়। আগে বিশ্বব্যাংক ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নামে একটি সূচক প্রকাশ করত। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কেমন তা তুলে ধরা হতো; কিন্তু কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রণীত ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো দেশ এই মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে যে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশকে কৃত্রিমভাবে ভালো দেখানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা এই অভিযোগের সত্যতা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিতর্কের মুখে বিশ্বব্যাংক ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রণয়ন ও প্রকাশকরণ স্থগিত ঘোষণা করে। সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ মোটেও উন্নতি হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের ক্ষেত্রে স্কোর করেছিল ১০০’র মধ্যে ৬১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ স্কোর করেছে ৫৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের সূচক কমেছে ৩ দশমিক ২ পয়েন্ট। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘বিজনেস রেডি’ সূচকে ৫০টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ সারিতে।

বিশ্বব্যাংক বা এ ধরনের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তা নানা কারণেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিদেশি বিনিয়োগকারী অথবা ব্যবসায়ীরা কোনো দেশের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক সৃষ্টির আগে সেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চায়। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা সংশ্লিষ্ট দেশ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে থাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন, ‘শীতের অতিথি পাখির মতো।’ শীতের অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তেমনি কোনো দেশে পর্যাপ্ত মুনাফার সম্ভাবনা এবং পুঁজি ও জীবনের নিরাপত্তা না পেলে বিনিয়োগ-বাণিজ্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা নানা আইনি জটিলতার কারণে নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হন। তারা চাইলেই বিদেশে গিয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন না; কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই জটিলতা বা সমস্যা নেই। তারা ইচ্ছে করলে কোনো দেশে বিনিয়োগ না করে অন্য দেশে চলে যেতে পারেন।

বিশ্বব্যাংকের রেটিংয়ে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কার্যকর উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের রেটিংয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে; কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বর্তমানে যেসব বিশেষ সুবিধা ভোগ করছে তা হারাতে হবে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।

বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশকে বর্তমানে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা সংবলিত জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) প্রদান করছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা বাংলাদেশকে দেবে। তারপর জিএসপি প্লাস নামে নতুন এক ধরনের সুবিধা প্রদান করবে; কিন্তু জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে বাংলাদেশের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সামগ্রীর প্রায় ৬০ শতাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানি করা হয়। এটা সম্ভব হচ্ছে মূলত জিএসপি সুবিধার কারণেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে প্রথম জিএসপি সুবিধা চালু করে। বাংলাদেশ সেই সময় থেকেই জিএসপি সুবিধা ভোগ করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোটা সুবিধা প্রদান করত; কিন্তু মুক্ত বাণিজ্য চালু হবার পর ২০০৫ সাল থেকে কোটা সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সীমিত পরিসরে জিএসপি সুবিধা প্রদান করছিল; কিন্তু কয়েক বছর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘন, কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দেয়া এবং এ ধরনের আরও কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে রাখে।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি খাতের কার্যকর সহায়তা ব্যতীত কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। আর দৃশ্যত উন্নয়ন অর্জিত হলেও তা টেকসই হবে না। বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন অর্থনীতিবিদরা এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করছেন যে, শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন অর্জিত হলেই একটি দেশের জনগণ সত্যিকার উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবে না যদি সেই উন্নয়ন কার্যক্রম টেকসই না হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়ন কৌশল একান্ত প্রয়োজন। উন্নয়নের নামে সরকার যদি তার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেন তাহলে সেই উন্নয়ন কখনোই টেকসই হতে পারে না।

বিশ্বব্যাংকের ‘বিজনেস রেডি’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আগামী এক দশক গড়ে প্রতি বছর ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যে আফ্রিকার দেশগুলোতেই ৩০ শতাংশ কর্মসংস্থান করতে হবে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে কোনোভাবেই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত প্রতিটি দেশই জাতীয়ভাবে দারিদ্র্য বিমোচনকে তাদের কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে; কিন্তু কীভাবে দারিদ্র্য বিমোচন হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ দেশের নীতি নির্ধারকদের কোনো সঠিক ধারণা নেই। চরম দারিদ্র্য নিরসনে অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশকে আগামী এক দশকে গড়ে ৯ শতাংশ হারে জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। ‘মিডিল ইনকাম ট্রাপ’ এড়ানোর জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন এবং তাকে টেকসই করার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতি বছর গড়ে ২ দশমিক ৪০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন তাহলো, ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’(এমডিজি) বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগিদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেত; কিন্তু সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসজিডি) বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিজেদের উদ্যোগেই প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করতে হবে।

আগামীতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন ও তা টেকসই করার বাণিজ্য-বিনিয়োগের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে; কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এ ধরনের উন্নয়নকামী দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভলিউম শুধু মুখের কথায় বা আইনি সহায়তা দিলেই বাড়বে না। এ জন্য কার্যকর বিনিয়োগ-বাণিজ্য পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত আবশ্যক। রপ্তানি বাড়াতে হলে স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কারণ সেই পণ্যটিই রপ্তানি করা হবে, যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়; কিন্তু আমরা রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য যতটা উৎসাহী বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ততটা আগ্রহী নই। ফলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় রপ্তানি বাড়ানোর জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; কিন্তু সেসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এক সময় রপ্তানিভিত্তিক উন্নয়ন কৌশলের কথা বলা হচ্ছিল। পরবর্তীতে ‘লুক ইস্ট’ নীতির কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু এসব নীতির কোনোটিই সুফল দিতে পারেনি। কারণ রপ্তানি বাড়াতে হলে তো উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সেটা কি আমরা বিবেচনায় রাখি?

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে আমরা যেসব দেশ বা অঞ্চলে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করি, সেসব দেশ বা অঞ্চলে রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। আবার যেসব দেশে বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বেশি সেই সব দেশ থেকে আমদানি করা হয় খুবই সামান্য পরিমাণ পণ্য। উদাহরণস্বরূপ চীন এবং ভারতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চীনের পরই ভারতের স্থান; কিন্তু চীন এবং ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রাপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে থাকে; কিন্তু এ দুটি অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ অতি সামান্য। চীন এবং ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আমরা সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। কান্ট্রি রেটিং খারাপ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে খারাপ বার্তা যাচ্ছে। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে খুব ভয়াবহভাবে। ইতিমধ্যেই বিদেশি অনেক ব্যাংক বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) গ্রহণের ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রদর্শন করছে। বাংলাদেশের কোনো আমদানিকারক যদি স্থানীয় কোনো ব্যাংকে এলসি খোলে তাহলে যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করবে সেই দেশের স্থানীয় কোনো ব্যাংকের গ্যারান্টি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি বাংলাদেশের ব্যাংকটি স্থানীয় ব্যবসায়ীর আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে বিদেশি যে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছিল তারা পণ্য মূল্য পরিশোধ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হবার পর্যায়ে রয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত এলসি বিদেশি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। তারা এলসি মার্জিন কমিয়ে দিয়েছে। আগামীতে এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাংলাদেশের বিপরীতে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে আমদানিকারকরা ৯৯১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়া নিয়ে উল্লসিত হবার কিছু নেই। কারণ সব আমদানিই খারাপ নয়। যদি অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসজাত পণ্য আমদানি হ্রাস পায় সেটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ; কিন্তু শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধবর্তী পণ্য আমদানি হ্রাস পেলে উদ্বিগ্ন হবার কারণ রয়েছে। গত দুই মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি হ্রাস পেয়েছে ৪৪ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে আগামীতে নিশ্চিতভাবেই শিল্প খাতে উৎপাদন হ্রাস পেতে যাচ্ছে।

এম এ খালেক: অর্থনীতিবিষয়ক লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ