ব্যাংক একীভূতকরণের আগে যেসব বিষয় বিবেচনা প্রয়োজন
দেশের ব্যাংকিং সেক্টর অনেক দিন ধরেই নানা জটিল সমস্যায় জর্জরিত। পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতা, ইনসাইড লেন্ডিং বৃদ্ধি পাওয়া, ব্যাংকের সংখ্যাধিক্য এসব জটিল সমস্যার কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে স্বাভাবিক কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই মূলত ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আমি একজন অর্থনীতিবিদ এবং একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপ। দুটি ব্যাংক যখন একীভূতকরণ করা হবে তার আগে দেখতে হবে এতে কী লাভ হবে। একীভূতকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুটি ব্যাংককে একত্রিত করে একটি বড় ব্যাংকে পরিণত করা, যাতে কাস্টমার বেইজটা বেড়ে যায়। ব্যাংকের পরিচালনা কার্যক্রমে অধিকতর গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। বিজনেস ভলিউম বেড়ে যায়। সর্বোপরী ব্যাংকটি যাতে বাজারে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পরিচালিত হয়ে লাভজনকতা অর্জন করতে পারে; কিন্তু এসব বিষয় বিবেচনা না করে যদি কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দুটি ব্যাংককে একীভূত করে দেন তাহলে উল্টো ফলাফল দেখা দিতে পারে। কাজেই এভাবে ব্যাংক একীভূতকরণ ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না।
সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করা হলে তার ফল কী হতে পারে তা আগে বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন ছিল। যেনতেনভাবে দুটি ব্যাংক একীভূতকরণ করা হলে একীভূতকরণের উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। একীভূতকরণের পর দুটি ব্যাংকই যাতে লাভবান হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংক একীভূতকরণ না করেও কিন্তু মার্জার হতে পারে। দুটি ব্যাংক একই ম্যানেজমেন্টের অধীনে সমান্তরালভাবে পরিচালিত হতে পারে।
যেভাবেই দুটি ব্যাংক একীভূতকরণ করা হোক না কোনো তার আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন আছে। এ জন্য বিস্তর গ্রাউন্ডওয়ার্ক করতে হবে। একীভূতকরণের পাশাপাশি আরও একটি উদ্যোগ নেয়া হয় সেটি হচ্ছে একুউজিশন বা অধিগ্রহণ। অধিগ্রহণের মাধ্যমে একটি বড় বা অধিকতর শক্তিশালি প্রতিষ্ঠান অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে। সবল ব্যাংক কর্তৃক দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে একীভূতকরণ অথবা অধিগ্রহণ যাই করা হোক না কোনো তার আগে এ ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করার ছিল, যাতে উদ্যোগটি সঠিক এবং ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে; কিন্তু প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রস্তুতিমূলক কাজ না করে এমন একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে তা উল্টো ফল দিতে পারে। এমনকি দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে পর সবল ব্যাংকটিও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
ব্যাংক একীভূতকরণ হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ হয়ে থাকে। তবে সব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন মিলিয়ে মোট ৬১টি ব্যাংক ব্যবসায়রত আছে। বাংলাদেশের মতো একটি অর্থনীতিতে এত বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে এক সময় প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের অনেকেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশে এতগুলো ব্যাংক স্থাপন করা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভায়াবল হবে কি না; কিন্তু উত্থাপিত প্রশ্নের কোনো সমাধান না করেই অনেক ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। সর্বশেষ সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময় ব্যক্তিখাতে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। সেই ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই ভায়াবল হয়নি। এগুলো ভালোভাবে চলছে না। কয়েকটি ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্থ ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকগুলো কীভাবে চলছে সে-ব্যাপারে সঠিক মনিটরিং এবং সুপারভিশন করা হয়নি। বিভিন্নভাবে এসব ব্যাংককে প্রণোদনা দেয়া হলেও তারা লাভজনকভাবে পরিচালিত হতে পারছে না।
বিষয়টি এখনো আমার নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তাতে এটাকে একীভূতকরণ বলা যেতে পারে। এক্সিম ব্যাংক সম্পর্কে আমি মোটামুটি জানি। বিভিন্নভাবে এই ব্যাংকের কার্যক্রম এবং আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হবার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, এক্সিম ব্যাংক বেশ ভালো অবস্থানে আছে। তারা লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে যেটুকু জেনেছি তাতে এই ব্যাংকটি মোটেও ভালোভাবে চলছে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পদ্মা ব্যাংক নানা ধরনের দুর্নীতি আর অনিয়মে জড়িত হয়ে পড়ে।
দেশের ব্যাংকং সেক্টরে এখন পদ্মা ব্যাংককে সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুটি ব্যাংক একীভূতকরণের পর যদি ব্যবসায়ের পরিধি বাড়ানো যায়, সুশাসন নিশ্চিত করা যায়, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তাহলে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সফল হতে পারে। অন্যথায় একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারবে না। একীভূতকরণ করার পর যে-কোনো মূল্যেই হোক গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের ওপর নির্ভর করেই চলে। কোনো কারণে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানো না গেলে সেই ব্যাংক কখনোই সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। একীভূতকরণের চূড়ান্ত পরিণতি কী হয় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দুটি ব্যাংক একীভূতকরণ করা হলেও তারা কিন্তু একটি ব্যাংকে পরিণত হবে না। তারা যৌথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমান্তরাল ভাবে চলবে; কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। কারণ বিষয়টি এখনো জনসমক্ষে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক উভয়ই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক। তবে এদের কার্যক্রমের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। সোনালী ব্যাংক মূলত স্বল্প মেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণ প্রদান করে থাকে। আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদি শিল্প ঋণ দিয়ে থাকে। এর আগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূতকরণ করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করা হয়। ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ করলে কেমন করবে তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ দুটি ব্যাংকের কাজের ধারা আলাদা রকমের। তাই এই দুটি ব্যাংক একীভূতকরণের আগে আরও চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংক একীভূতকরণ করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং এতে উভয় ব্যাংকের অবস্থাই খারাপ হয়ে যেতে পারে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পূর্বে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই কওে যদি প্রতীয়মান হয় যে, এর মাধ্যমে ভালো ফল পাবার সম্ভাবনা আছে শুধু তা হলেই একীভূতকরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
এটি একটি বড় এবং জটিল প্রশ্ন। নানা কারণেই আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেট সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারছে না। শেয়ার বাজারের উপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার আভাব রয়েছে। দেশের বৃহৎ এবং ভালো ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে তাদের কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহী হচ্ছে না। বাজারে বিভিন্ন সময় কারসাজির কথা শোনা যায়। শেয়ার বাজার সব সময়ই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলে; কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে যেভাবে উত্থান-পতন ঘটে তা স্বাভাবিক নয়।
১৯৯৬ সাল এবং ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে মারাত্মক অনিয়ম আর জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পুঁজি হারিয়ে অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন; কিন্তু যারা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা যায়নি। ফলে শেয়ার বাজার অনেকের নিকট একটি আতঙ্কের নাম। বাজারের ওপর সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো না গেলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছেড়ে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।
ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান দক্ষ এবং অভিজ্ঞ লোক দ্বারাই পরিচালিত হওয়া উচিত। এখানে আবেগ বা রাজনৈতিক বিবেচনার কোনো স্থান নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলে তার পরিণতি যে ভালো হয় না। নতুন প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের দুরবস্থা তারই প্রমাণ।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপিঋণ সমস্যা অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। নানাভাবে চেষ্টা করেও এই সমস্যার কোনো সমাধান করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সূত্র মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অন্য একটি সূত্র মতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকার মতো; কিন্তু অনেকেই মনে করেন, দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক, পুনঃতপশিলীকৃত ঋণাঙ্ক এবং মামলাধীন প্রকল্পে নিকট দাবিকৃত অর্থ সহ খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ পৌনে চার লাখ কোটি টাকার মতো হবে।
খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কত তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান হার যে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে চলেছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তাই যে-কোনো মূল্যেই হোক আমাদের খেলাপি ঋণ আদায় করতেই হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। তবে বিভিন্ন আইনি পরিবর্তনের মারপ্যাঁচ, বিশেষ করে ২ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুন:তফসিলিকরণের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদেও ক্ষেত্রে কী হবে?
এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি; কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এদের ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এই আইন বাতিল না করা পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণ সম্ভব হবে না। কোনো ঋণ হিসাব খেলাপি হয়ে পড়ার পর তা থেকে কিস্তি আদায়ের জোর চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি ঋণ অনুমোদন পর্যায়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে অনুমোদন পরবর্তী পর্যায়ে ঋণ হিসাবটি খেলাপিতে পরিণত না হয়। কিছু মানুষ আছে যাদের উদ্দেশ্যই থাকে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করা। এ ধরনের ঋণ আবেদনকারীর আচরণ দেখে অনেক সময় ঋণ অনুমোদনের আগেই তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব। এছাড়া ঋণ অনুমোদনকালে বন্ধকী সম্পত্তি যদি সঠিকভাবে ভ্যালুয়েশন করা হয় তাহলে খেলাপি ঋণের প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। ব্যাংকাররা যদি সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাংকের স্বার্থে কাজ করেন তাহলে খেলাপি ঋণের প্রবণতা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। কারণ ব্যাংকারদের সহায়তা ছাড়া একজন ঋণ গ্রহীতার পক্ষে খেলাপি হওয়া সহজ নয়।
এক শ্রেণির অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তা ব্যক্তি স্বার্থে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পার্টিকে ঋণ অনুমোদন দিয়ে থাকেন। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঋণ অনুমোদনের সময় কারা কারা জড়িত ছিলেন। তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ থাকবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়; কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেন মাত্রা অতিক্রম করে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু কিছু ঋণ গ্রহণকারী আছেন, যারা ব্যাংক থেকে যেনতেনভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেন। ব্যাংক কর্মকর্তা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে এই প্রবণতা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া যাকে ঋণ দেয়া হচ্ছে শুধু তার কাগজপত্র দেখলেই চলবে না। তার মনস্তত্বও নিরীক্ষা করতে হবে। তিনি কি আসলেই একজন ভালো উদ্যোক্তা হবেন নাকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করবেন বা আত্মসাৎ করবেন এটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক পিএলসি; পরিচালক পরিচালনা বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক সদস্য পরিকল্পনা কমিশন।
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে