চট্টগ্রামে বাধার মুখে মাঝপথে একুশের আবৃত্তি অনুষ্ঠান বন্ধ
চট্টগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত কবিতা আবৃত্তির একটি অনুষ্ঠার মাঝপথে বাধা দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) বিরুদ্ধে। জানা গেছে, একটি কবিতায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ থাকায় জাসাস এমনটি ঘটিয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারের পাশে এই ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলন নামে একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ এই কবিতা পাঠ আসরের আয়োজন করেছিলো।
জানা যায়, মঞ্চে পৌনে ১১টার দিকে এক আবৃত্তিশিল্পী কবি রবিউল হুসাইনের ‘এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট’ কবিতাটি পড়ছিলেন। ওই কবিতার কয়েকটি লাইনে বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, একাত্তর, সাতই মার্চ শব্দ ছিল। এই লাইনগুলো পড়ার পর মঞ্চের উল্টো পাশে পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে মহানগর জাসাসের আহ্বায়ক এম এ মুসা বাবলু ও সদস্য সচিব মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল লোক এসে প্রতিবাদ জানায়। তারা কবিতা আবৃত্তিকারকে হেনস্তা করে। একপর্যায়ে তাকে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করা হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিশফাক রাসেল ভিউজ বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে পৌনে ১১টার দিকে এক আবৃত্তিশিল্পী কবি রবিউল হুসাইন ‘এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট’ কবিতাটি পড়ছিলেন। এই কবিতার কয়েকটি লাইনে বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, একাত্তর, ৭ মার্চ, মাওলানা ভাসানী ইত্যাদি শব্দ ছিল। এই লাইনগুলো পড়ার পর মঞ্চের উল্টো পাশে পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে জাসাসের নেতাকর্মীরা এসে প্রতিবাদ জানান। যিনি কবিতাটি পড়ছিলেন, তাকে হেনস্তা করা হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে আমরা অসহায়ের মতো অনুষ্ঠান বন্ধ করে চলে এসেছি’।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর জাসাসের আহবায়ক এম এ মুসা বাবলু ভিউজ বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘ওই প্রোগ্রামে প্রকাশ্যে বিগত সরকারের গুণকীর্তন করে কবিতা আবৃত্তি করা হচ্ছিল। এসময় তারা জুলাই আন্দোলনকে তাচ্ছিল্য করেও কথা বলছিলেন। বিষয়টি খেয়াল করে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করেছে। একপর্যায়ে তারা (আয়োজকরা) নিজেরাই ভুল বুঝতে পেরে অনুষ্ঠান বন্ধ করে চলে যায়’।
মহানগর জাসাসের সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ শিপন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছিল। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। পরে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে’।
তিনি বলেন , ‘তারা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করছিল। কবিতায় তারা বলছিল একাত্তর ভুলে গেছি, মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গেছি। তাই আমরা প্রথমে তাদের নিষেধ করেছি। পরে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এরপর যে ছেলেটি কবিতা পড়ছিল, সে ক্ষমা চেয়েছে’।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম ভিউজ বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘ওখানে একটা অনুষ্ঠানে আবৃত্তির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলেছে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে আমাদের ভ্রাম্যমাণ দল সেখানে যায়, এরমধ্যে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে