সুনামগঞ্জে তালা ভেঙে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন মুক্তিযোদ্ধারা
মহান স্বাধীনতা দিবসে ডিএস রোডের পুরাতন শহীদ মিনারের তালা ভেঙে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় শহিদ মিনারে গিয়ে গেটে তালা দেয়া দেখে ক্ষুব্দ হয় তারা। পরে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এর আগে রাতে স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে তালা দেয়া দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সুনামগঞ্জ মুক্ত হয় ডিসেম্বরের ৬ তারিখে। ১৬ ই ডিসেম্বরের পূর্বেই ডিএস রোডের (দেওয়ান সাহেব রোডের) এই শহীদ মিনারটি নিজ হাতে নির্মাণ করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ। তৎকালীন মেজর মোতালিবের (সাব—সেক্টর কমান্ডার) নির্দেশনায় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী তাৎক্ষণিক এই শহীদ স্মৃতি ফলকটির নকশা তৈরি করে দেন। ধারণা করা হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মিত এটিই বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার। সুনামগঞ্জ শহরে মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলনের আর কোন স্মৃতি ফলক না থাকায় এই একটিই হয়ে ওঠে একাত্তরের স্মৃতি ফলক এবং বায়ান্নের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর শহীদ মিনার। তবে এটি শহীদ মিনার নামেই বেশি পরিচিত।
সুনামগঞ্জ কোর্ট চত্বরে গত কয়েক বছর আগে একাত্তরের শহিদ স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর থেকে জাতীয় দিবসে পুরাতন এবং নতুন এই দুটি শহীদ বেদীতেই পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। কিন্তু এই বছর মহান স্বাধীনতা দিবসে পুরাতন শহীদ মিনারের প্রবেশ গেট তালা দেয়া থাকে। অনেকেই শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাধ্য হয়ে কোর্ট চত্ত্বরের স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পুস্পস্তবক অর্পণ করতে গিয়ে গেটে তালাবন্ধ দেখে ক্ষুব্দ হয়ে তালা ভেঙে শহীদ মিনারে প্রবেশ করে শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন।
জেলা উদীচীর সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বললে, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনারে গেটে তালা দেয়া দেখে আশ্চয্যর্ হয়েছি। এই প্রথম কোন স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে গেটে তালাবদ্ধ দেখে ফিরে এলাম। পরে কোর্ট চত্বরে স্মৃতি ফলকে গিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করেছি। গেটে কেন তালা দিয়ে রাখা হলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রেওয়াজ অনুযায়ী এই শহীদ মিনারেই ফুল দিতে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরে তালা ভেঙ্গে শহীদ মিনারে প্রবেশ ছাড়া উপায় ছিল না তাদের।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনারে তালা দিয়ে রেখে তারা দায়িত্বহীন কাজ করেছেন। আমরা বাধ্য হয়েই তালা ভেঙ্গে শহীদ মিনারে প্রবেশ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজ হাতে নির্মিত সুনামগঞ্জের এই শহীদ মিনার। স্বাধীনতা দিবসে তালা দেয়া দেখে খুবই মমার্হত হয়েছি।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূরুল মোমেন বলেন, ‘ফুল দিতে গিয়ে দেখি শহীদ মিনারের গেটে তালা দেয়া। স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনার তালা দেয়া এটি মেনে নেয়া যায় না। তাই মুক্তিযোদ্ধাগণ ক্ষুব্দ হয়ে তালা ভেঙ্গে শহীদ মিনারে প্রবেশ করে এবং পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। শুনেছি অনেকেই শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে গেটে তালা দেয়া দেখে ফিরে গেছেন।’
তালা কারা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনারটি বর্তমানে পৌর প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে। পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভার পৌর প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বললে, ‘শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। আর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্বা জানানো হয়। স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া হবে, তাই পুরাতন শহীদ মিনার বন্ধ রাখা হয়।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে