Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বিষপানে দিনে ১৭৫ জন হাসপাতালে

মোকাবিলায় সমাধানসূত্র জরুরি

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

প্রবাদে আছে, মানুষ বাঁচার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে। তাহলে মানুষ কেন আত্মহত্যার মতো একটি ভয়াবহ পথ বেছে নেয়? সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে? আর ডিপ্রেশন হচ্ছে সেই রোগ, যেটি মূলত চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়। এটা অনেকটা সামাজিক আর পারিবারিকভাবে সৃষ্ট।

গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের বেশির ভাগই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন বিষ খেয়ে। কারণ, বাংলাদেশে বিষ সহজলভ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রকাশনা হেলথ বুলেটিন (সর্বশেষ ২০২০) বলছে, সারা দেশে বছরে বিষক্রিয়ায় ৬৪ হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। অর্থাৎ দৈনিক ১৭৫ জন বিষপানে হাসপাতালে আসছেন। বিষক্রিয়ার রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর ২ শতাংশ। মৃত্যুও অনেক বেশি।

কিন্তু কেন বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যা? সত্যি বলতে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয় না। তাও সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে যতটুকু জানা যায় তাতে এতটুকু অনুমান করা যায়, বিষণ্নতা ও হতাশার কারণেই আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যাদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি, তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা বিষণ্নতা নেই এমন মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। উপকূলীয় এলাকা দাকোপে মানুষের বিষ খাওয়ার সঙ্গে বিষণ্নতার একটি সম্পর্ক হয়তো আছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলের প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ মাঝারি থেকে তীব্র বিষণ্নতায় ভুগছেন।

শুধু বিষণ্নতাই আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। প্রথমত খতিয়ে দেখতে হবে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা কেন ভর করে? অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, পারিবারিক অশান্তি, জীবনযাপনের অনিশ্চয়তা অনেক কিছুই বিষণ্নতার কারণ। উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জীবনসংগ্রাম অত্যন্ত কঠিন। কঠিন জীবনসংগ্রাম এই দেশের মানুষের হাজার বছর ধরেই ছিল। চিরকালই এদেশের মানুষ বন্যা-খড়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্দশা, দুরাবস্থার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থেকেছে। হঠাৎ কী হলো দেশে যে আত্মহত্যার সংখ্যা এমন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে!

তা ছাড়া বাংলাদেশ ক্ষতিকর বিষ খুবই সহজলভ্য। যার-তার হাতের কাছেই সব সময় এসব বিষ পাওয়া যায়। রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষ চাইলেই বিষ পান করে ফেলতে পারেন। অতি ক্ষতিকর কীটনাশক বিশ্বের অনেক দেশই নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশে সেগুলোর ব্যবহার আছে। অচিরেই তা বন্ধ করতে হবে।

মানুষ যেন বিষ না খায় বা কীটনাশক-আগাছানাশক থেকে মানুষ যেন দূরে থাকে, এমন প্রচারের বিষয়ে তেমন কোনো সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিষ খাওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে অনেককে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়, মনে রাখতে হবে এটি একটি রোগ, অপরাধ নয়। এর সামাজিক প্রতিকার প্রয়োজন। আর এই প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন সঠিক গবেষণা ও সচেতনতা। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। আসুন, আমরা আত্মহত্যাকে ‘না’ বলি, জীবনকে ভালোবাসি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ