সিলেটের ৫ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা, পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ
মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বাড়ায় আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা। উপজেলাগুলো হলো-কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ। এসব উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে প্লাবিত পাঁচ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাঁচ উপজেলার মানুষের জন্য ২০০ বস্তা করে মোট এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেটের নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কানাইঘাট উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১৭ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে সারি গোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও পাহাড়ি ঢলের পানি সিলেট-তামাবিল সড়ক উপচে পড়ে প্লাবিত হয়, পরে তা নেমে গেছে। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাতে অন্ধকার ও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় সমস্যা হচ্ছিল। ভোর থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। মানুষকে উদ্ধার করা গেলেও গৃহপালিত পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপাতত এসব পর্যটন কেন্দ্রে না যেতে বলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে