Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে নামতেই ফের বন্যার কবলে নোয়াখালীর মানুষ

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জীবন-জীবিকার নতুন সূচনায় ঘুরে দাঁড়ানোর কঠোর সংগ্রামে নামতেই দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ বানের মুখোমুখি নোয়াখালী-ফেনী অঞ্চলের অর্ধকোটিরও বেশি বন্যার্ত ও পানিবন্দি মানুষ। বন্যার পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে কেবলই বসতবাড়িতে ফিরছিলেন বানভাসি মানুষ। বিধ্বস্তপ্রায় ঘর ঠিকঠাক করে প্রস্তুতি চলছিল ফের বসবাসের। এ অবস্থায় আবারও আশ্রয়কেন্দ্রেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সাপের উপদ্রব আর পানিবাহিত নানা রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব। আবহাওয়া দপ্তর ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, প্রথম দফার বন্যার পানি কমতে শুরু করে গত শুক্রবার থেকে; কিন্তু ওইদিনই রাত থেকে তিন দিনের বৃষ্টিতে নদনদীতে আবারও বেড়েছে দেড় ফুট পানি। টানা ভারি বর্ষণে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে নোয়াখালী জেলা।

সরেজমিন দেখা গেছে, আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দি ও বানভাসিদের। ফের আশ্রয়কেন্দ্রেই ছুটছেন সদ্য বাড়িফেরা মানুষগুলো। নতুন করে ভোগাচ্ছে সাপের উপদ্রব। নোয়াখালী-ফেনী অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ গত দেড় মাস ধরে ডুবে আছেন বানের পানিতে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়ে যখনই বানভাসি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফেরা শুরু করছিলেন, ঠিক তখনই আবারও চলছে টানা ভারি বর্ষণ।

শুক্রবার রাত থেকেই নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ভারি বৃষ্টিপাতে প্লাবিত। নতুন করে ডুবছে সড়ক ও মাঠঘাট। বসতঘরে পানি ওঠায় অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, গত দুদিনই গড়ে ১২০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

নোয়াখালী সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের আবদুর রশিদ জানান, প্রায় ২০ দিন পর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজন মাত্রই ঘরেফেরা শুরু করেছিলেন। তবে শনিবার থেকে ফের বন্যার পানি বাড়তে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেই ফিরে আসছেন তারা। রশিদের নেতৃত্বে থাকা কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রথম দফার বন্যায় আশ্রিত ছিলেন প্রায় ২ হাজার ৪০০ বানভাসি।

নোয়াখালী সদর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরের মোজাম্মেল হেসেন বলেন, 'বন্যার পানি কমে মাত্রই ঘর-বাড়ির পুনর্বাসন শুরু করতে যাবে, এমন সময় আবারও এই অতিবর্ষণ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে।'

বেগমগঞ্জ উপজেলার ছোয়ানি ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমন সিকদার বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়িতে এসেছিলাম তিন দিন আগে। অনেক কিছু গুছিয়ে বসবাসের উপযোগী করেছিলাম। গতকালের (শনিবার) বৃষ্টিতে এখন আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি। আল্লাহ সহায় না হলে আমাদের আর কিছুই করার নেই।'

নোয়ান্নুই ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, 'গত বেশ কিছুদিন সড়কে পানি একদম ছিল না। সব শুকিয়ে গিয়েছিল। একরাতের বৃষ্টিতেই পুরা রাস্তা এবং বাসা পানির নিচে চলে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে । এর ওপরে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। আল্লাহ সহায় হোন।'

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'ফের বন্যার কবলে পড়ছে জেলার উপকূল, চরাঞ্চল এবং নদীপাড়ের জনপদগুলো। উপজেলা প্রশাসনগুলোর মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ রাখছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। বানভাসিরা সেগুলোতে আসছেন। বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।'

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনে তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। কেবল রাতে হয়েছে। তবে শনিবার থেকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হচ্ছে।

তিনি জানান, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সমুদ্রে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত চলায় রোববারও একই ধারায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা বলেন, 'বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় ১০টি ট্রলার নদীতে ডুবে গেছে। এখনো নিখোঁজ ৩০ জনের বেশি জেলে। দ্বীপ হাতিয়ার সঙ্গে আমাদের সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। কেউ হাতিয়ায় আসতে পারছেন না, যেতেও পারছেন না।'

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নোয়াখালীর আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি। ৩৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ৫০ হাজার বানভাসি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ