Views Bangladesh Logo

বনপ্রহরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বনও নিরাপদ থাকবে না

সোনার গহনার বাক্স নিয়ে একটা শোলক প্রচলিত আছে গ্রামবাংলায়। কে বেশি দামি- সোনার গহনা না কি গহনা রাখার সিন্দুক? কথাটা এ জন্য বলা হয় যে, সিন্দুক যদি সুরক্ষিত না হয় তাহলে গহনা চুরি যাওয়ার ভয় থাকে। তেমনি একটা দেশে বন যেমন সোনার গহনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেই বন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বনপ্রহরীরাও গহনা রাখার সিন্ধুকের মতোই মূল্যবান।

চোর-ডাকাতের হাত থেকে জীবন বাজি রেখে বনকে রক্ষা করেন মূলত বনপ্রহরীরা; কিন্তু আত্মরক্ষার কোনো হাতিয়ার না দিয়ে বনপ্রহরীদের যদি বনে পাঠানো হয়, তার মানে হাত-পা বেঁধে কাউকে কুমির-হাঙ্গরভর্তি নদী-সমুদ্রে ফেলা।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে এরকমটাই জানা গেল, টেকনাফে বনকেন্দ্রিক অপরাধ বেড়েছে। টেকনাফে বিশাল বনাঞ্চলের তুলনায় প্রহরীর সংখ্যা এমনিতেই অপ্রতুল, তাদের বন পাহারায় পাঠানো হয় আত্মরক্ষার হাতিয়ার ছাড়া। ঢাল-তলোয়ারহীন বনপ্রহরীরা যেন নিধিরাম সর্দার।


প্রাপ্ত তথ্য মতে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৫০ হেক্টর। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই বনে যে কোনো কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। অথচ টেকনাফে এই বিশাল বনাঞ্চল পাহারার জন্য প্রহরী রয়েছেন মাত্র ৪১৫ জন। অর্থাৎ গড়ে ৪৫ হেক্টর বনাঞ্চল পাহারার দায়িত্ব পালন করেন মাত্র একজন। ফলে গাছ চুরিসহ বনকেন্দ্রিক নানা অপরাধ ঠেকানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে।


এর মধ্যেই নতুন করে যোগ হয়েছে অপহরণ আতঙ্ক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, গত এক বছরে টেকনাফে অন্তত ১৮৭ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে আছেন বনরক্ষীরাও। ফলে বন রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, সেই বনরক্ষীরাই এখন আতঙ্কে দিন পার করছেন।

বনপ্রহরীরা বলছেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং, জাদিমুড়া, লেদা, মৌচনী, নেচার পার্ক, রাজারছড়া, বাহারছড়া ও শীলখালীর বেশ কয়েকটি স্থান থেকে অপহরণের ঘটনা ঘটে বেশি। এর মধ্যে মাঠপাড়া, শিয়াল্লাগুনা, বেতবুনিয়া, হরবইন্ন্যার জোড়া, বরছড়া, বালুরমাঠ, পাহাড়ের টিএনটি, বড় ছংকলা অন্যতম। কিছুদিন আগে জাদুমুড়া বনে কাজ করতে যাওয়া ১৯ শ্রমিক অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। এর পর থেকে বনপ্রহরীরাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।


টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বলতে গেলে বন এখন প্রহরীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত বনকে নিরাপদ করে তুলতে অভিযান চালানো। অন্যথায় বন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

আমরা জানি বন আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নির্বাচনের জন্য বনজ সম্পত্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে টেকনাফ অঞ্চলের বনাঞ্চলের গুরুত্ব অনেকটা সুন্দরবনের মতোই। সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় এই বনাঞ্চল অনেক সামুদ্রিক ঝড় থেকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে। বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে এই বন উজাড় হয়ে যাক আমরা তা চাই না। বনখেকোদের হাত থেকে এই বনকে বাঁচাতে হলে বন পাহারার বিকল্প নেই।


আর এই বন পাহারা শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই বনপ্রহরীদের আত্মরক্ষার হাতিয়ার দিতে হবে। প্রয়োজনে দস্যুদের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করার মতো অস্ত্রশস্ত্রও দিতে হবে। আর অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সবসময় বনের দিকে নজর রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও মাঝে মাঝে বনে টহল দিতে হবে। সবশেষে একটা কথা মনে রাখতে হবে, বনপ্রহরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বনও নিরাপদ থাকবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ