২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশেষ প্রসিকিউশন গঠন করুন
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছর শাসনকালে (২০০৯-২৩) ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশন। শ্বেতপত্রে প্রকাশিত এই অর্থের পরিমাণ অবাক করার মতো। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দেশে কী পরিমাণ দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপি হলে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হতে পারে।
কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে, হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং জমি কেনায় হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে বাড়ানো হয়েছে অনেক। যা টাকার অঙ্কে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। আবার কোথাও কোথাও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। এই টাকার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
আমরা জানি, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়ই বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাও বিভিন্ন সময় অর্থ পাচার নিয়ে নানা ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তবু বলব, শ্বেতপত্রে প্রকাশিত তথ্যের মতো এত কংক্রিট তথ্য আর কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে পারেনি। একই সঙ্গে আমরা নতুন সরকারকে সাধুবাদ জানাতে চাই, কারণ তারা দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ, সিআইডি ও দুদকের সহায়তায় বিদেশে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেছে।
আমরা জানি, দেশের বিশেষ একশ্রেণির মানুষ বিদেশ থেকে পণ্যের দর কম দেখিয়ে পণ্য আমদানি করেন। এর মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন কর ফাঁকি দিচ্ছেন, অন্যদিকে অর্থ পাচার করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন; কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি। তবুও বলব, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেয়ার পর অর্থ পাচার অনেকটাই কমে গেছে।
আবার প্রবাসীদের মধ্যে বৈধপথে অর্থ পাঠানোর পরিমাণও বেড়েছে। বাণিজ্যনির্ভর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আগে ভালোভাবে দেখা হতো না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কড়াকড়ির পর এখন বোঝা যাচ্ছে, বড় ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিরা বাণিজ্যের আড়ালে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করতেন।
অর্থনীতির প্রতিটি উদ্দীপক একটি অপরটির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যে কারণে বাণিজ্যের আড়ালে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলাদের একটি অংশ বিদেশে টাকা পাচার করছে, সে কারণে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। তাই খেলাপি ঋণ, দুর্নীতি ও হুন্ডিব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা আছে। তাই অর্থ পাচারে জড়িতদের বিচারের জন্য একটি বিশেষ প্রসিকিউশন এখনই শুরু করা দরকার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে