Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বিচারপতি নিয়োগে ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন চূড়ান্ত

Hira  Talukder

হিরা তালুকদার

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিগত কয়েক দশকে দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও অস্বচ্ছতার মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। অথচ জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১০ অনুচ্ছেদ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চয়তা দেয়। এ অধিকারগুলো কার্যকর করতে দরকার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশের উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ হয়ে আসছে সরকারের ইচ্ছা অনুসারে। তবে এই পরিস্থিতির হতে চলছে পরিবর্তন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মতামত নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠান আইন মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবনায় বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাকে উদাহরণ হিসেবে আনা হয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন রয়েছে। ওই প্রস্তাবনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের জন্য ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন এই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এই কাউন্সিলের সদস্য হবে ১০ জন। এখনে সদস্য হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক বিচারপতি, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে। কাউন্সিল বিচারপতি নিয়োগের জন্য কাউন্সিল সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারক নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাঠানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধ জ্ঞাপনের ভিত্তিতে ওই পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রেরণের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

এ ছাড়া, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত বা পরামর্শ নেওয়ার জন্য কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তিকে কাউন্সিলের সভায় আহ্বান করতে পারবে বা যে কোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিলের চাহিদাকৃত তথ্য উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সংবিধান অনুযায়ী অভিজ্ঞতার তথ্য নির্ধারিত ছকে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বিচারক হিসেবে নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে সুপারিশ করার জন্য কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ পাঠাবেন। এ অনুরোধ পাওয়ার পর কাউন্সিল সুপারিশ পাঠাবেন। এ ছাড়া একজন জেলা জজকে হাইকোর্টে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেয়ার আগে সর্বশেষ দুটি কর্মস্থলে তার কর্মকাণ্ড কেমন ছিল, সে ব্যাপারে খোঁজ নেবে এই কাউন্সিল।

বর্তমানে বিচারক নিয়োগ-সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন। (২) কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হইলে এবং (ক) সুপ্রিম কোর্টে অন্যূন দশ বছরকাল অ্যাডভোকেট না থাকিয়া থাকিলে; অথবা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বৎসর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করিয়া থাকিলে; অথবা (গ) সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকিয়া থাকিলে তিনি বিচারকপদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না।’

জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এই আইনের আলোকেই কাজ করবেন বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া হাইকোর্টে দুই বছর অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর অনেক বিচারককে স্থায়ী করা হয় না। ভবিষ্যতে যেন কেউ স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে শিকার না হন, সে বিষয়েও জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল কাজ করবেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারিক আদালতের বিচারকদের দুর্নীতি ও গুরুতর অসদাচরণের বিষয়ে নজরদারি করতে একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, এই কমিশন বছরজুড়ে বিচারকদের ওপর নজরদারি করবেন। যাতে বিচারকরা দুর্নীতি ও অসদাচরণের আশ্রয় নিতে না পারেন। আর দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও যেন তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ