হাত বেঁধে নারীর চুল কেটে মুখে কালি লেপনের মামলায় গ্রেপ্তার চারজন
যশোরের ঝিকরগাছায় হাত বেঁধে মারধর এবং চুল কেটে মুখে কালি লেপনের ঘটনায় মামলা করেছেন নির্যাতিতা ফজিলা খাতুন চম্পা। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ফজিলা চম্পা উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তোরাব মোড়লের মেয়ে।
আর গ্রেপ্তারকৃতরা পাশের গদখালি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা। তারা হলেন, বেনেয়ালি কলাবাগানপাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে শিমুল হোসেন, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালি গ্রামের মফিজুরের স্ত্রী রনি বেগম ও পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে ঘটনার রাতেই ঝিকরগাছা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন চম্পা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চম্পার ওপর নির্যাতন চালিয়ে পুরো ঘটনাটির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ছড়িয়ে পড়া এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধা চম্পাকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। তাকে ধরে রেখেছেন চারজন নারী। তাদের একজন হাত বাঁধা ওই নারীর চুল কাটছেন। তাকে ঘিরে থাকা উৎসুক নারী-পুরুষ মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্যটি ধারণ করে উল্লাস করছেন’।
ভুক্তভোগী চম্পা জানান, বেনেয়ালি গ্রামে তালাকপ্রাপ্ত পুত্রবধূকে দেখতে যান তিনি। তখন পুত্রবধূর পরিবারের লোকজনের হাতে মারধর ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাবলুর রহমান খান বলেন, চম্পা তার পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে তার নতুন স্বামীর বাড়িতে যান। বিথির স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন আটকে রেখে তার মাথার চুল কেটে দেয়। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। এ মামলা এজাহারভূক্ত চারজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর বাকিদেরও ধরতে অভিযান চলছে।
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে রায়হানের সঙ্গে পাশের পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের মেয়ে বিথির দুই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর বিথির বেনেয়ালি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। রোববার তার ওপর নির্যাতন চালান বিথির নতুন স্বামী শিমুল হোসেন, চাচি শারমিন আক্তার রুমি, চাচিশাশুড়ি রনি বেগম, মা রহিমা বেগমসহ তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন। মাথার চুল কেটে মুখে কালি লেপন ছাড়াও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন তারা। উপস্থিত বহু নারী-পুরুষ পুরো ঘটনা ভিডিও করে।
তিনি বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে শিমুলের বাড়ির পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখেন এবং সন্ধ্যার পর দেশি অস্ত্র দিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা চালান। কোথাও অভিযোগ করলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয় দেখান অভিযুক্তরা। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে থানায় মামলাটি করেন করেন তিনি।
স্থানীয় গদখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘তাবিজ-কবজ (যাদু) করার সন্দেহে ওই নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। এভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে