Views Bangladesh Logo

দীর্ঘ ছুটির ফাঁদ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিন

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার যে কোনো দিক নিয়ে কথা বলতে গেলেই এক করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। মনে হয় এ দেশের শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করার জন্যই বোধহয় তাদের শিক্ষাজীবনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সরকারই যেন পরিকল্পনা করেই এমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত কেবল পিছিয়েই যায়। এ দেশের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম থেকে শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনা, পরীক্ষাব্যবস্থা সবই পশ্চাৎপদ, প্রশ্নবিদ্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অস্বাভাবিক ছুটি।

এ বছরের ছুটির তালিকায় মোট ৭৬ দিন ছুটি রয়েছে; কিন্তু বাস্তবে এই ছুটি আরও অনেক বেশি। পাবলিক পরীক্ষার সময় ক্লাস বন্ধ থাকলেও এটি আবার শিক্ষার বার্ষিক ছুটির তালিকায় ছুটি হিসেবে নেই। যেমন এ বছরের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ছুটির তালিকায় এসএসসি পরীক্ষার কারণে হাজারো বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধের কথা নেই।

আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘শিক্ষার হালচাল ও আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক এক পরামর্শক সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। তাতে বছরের বেশির ভাগ সময় বিদ্যালয় বন্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়। এই প্রবন্ধে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসের চিত্র তুলে ধরা হয়। এ সময় মোট দিবস ছিল ৪২৭টি। এর মধ্যে খোলা ছিল ১৪৮ দিন। বাকি ২৭৯ দিনই বন্ধ ছিল। ওই সময় কোন মাসে কত দিন খোলা ও বন্ধ ছিল তারও চিত্র তুলে ধরা হয়। যেমন ২০২৩ সালের আগস্টে মোট ৩১টি দিবসের মধ্যে ১৫ দিন বন্ধ ছিল। আবার গত বছরের জানুয়ারিতে ১৮ দিন বন্ধ ছিল। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দিন বন্ধ ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঈদ-পূজা, নানা জাতীয় দিবস উপলক্ষে স্কুলগুলো দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়ে, এর সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার সময় বেশির ভাগ স্কুল পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেব ব্যবহার করায় তখনো এক দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে স্কুল, এতে করে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সীমাহীন ক্ষতি হয়। এ পরিস্থিতিতে শিখন-ঘাটতি নিয়েই প্রতি বছর ওপরের ক্লাসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। ঠিকমতো ক্লাস-লেখাপড়া ছাড়া ওপরের ক্লাসে উঠলে পাবলিক পরীক্ষায় এই শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো ফল অর্জন কতটা সম্ভব?

এবার এসএসসি পরীক্ষায়ও আমরা কিছু ভয়াবহ চিত্র দেখলাম। অনেক শিক্ষার্থী অটোপাস চেয়েছে, বিভিন্ন স্কুলে নকল করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থী পাস করে বেরিয়ে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো কোনো বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না, তখন তারা কী করবে? বেকারত্বের বোঝা বাড়াবে। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যেন পরিকল্পনা করেই বেকারত্ব তৈরির এক কারখানা। এ থেকে জাতির মুক্তি কবে হবে? শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনার জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আছে অনেক দিন ধরেই।

উপজেলা সদরে এসব ভবন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হলেও তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাও যদি হতো তাহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ ছুটির ফাঁদ থেকে কিছুটা মুক্তি পেত। পাশাপাশি সময় এসেছে ঈদ-পার্বণ ঘিরে অন্যান্য সরকারি ছুটিও কমানোর। শিক্ষাজীবন অত্যন্ত কঠিন অধ্যবসায়ের, নিয়ামানুবর্তিতার। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা দেখলে মনে হয় এটা যেন বিনোদনের একটা জায়গা। হেলাফেলা করে এই শিক্ষাব্যবস্থা আর কতকাল চলবে? সময় এসে শিক্ষাব্যবস্থার খোলনালচে আমূল বদলে ফেলার। তাহলে জাতি হিসেবে আমরা কোনোদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দিকে সরকারের আরও গভীর মনোযোগ দেবে- এটাই প্রত্যাশা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ