উদ্বোধনী সংখ্যা ৩ : ফিরে দেখা ২০২৩
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেমন ছিল ২০২৩ সাল?
কালের পরিক্রমায় আরও একটি খ্রিষ্টীয় বছর আমরা পেরিয়ে এলাম। খ্রিষ্টীয় ২০২৩ সাল নানা কারণেই ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয় একটি বছর। করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল ঠিক সেই সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (ইউক্রেন যুদ্ধ)। এই দুটি দেশের মধ্যে সৃষ্ট অসম যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়ায়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির পেছনে উৎপাদন হ্রাস জনিত সংকট খুব একটা ভূমিকা পালন করেনি। বরং এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য সাপ্লাই সাইড বিপর্যস্ত হওয়াটাকেই অর্থনীতিবিদরা দায়ী করে থাকেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের উৎপাদন ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। ইউক্রেন ও রাশিয়া মিলিতভাবে বিশ্বের মোট দানাদার খাদ্যের ৩০ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে। যুদ্ধ শুরুর বছর এই দুটি দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক।
ইউক্রেন ৬ কোটি ৮০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদন করে; কিন্তু সেই খাদ্য তারা বাইরের দেশে রপ্তানি করতে পারেনি। উৎপাদিত খাদ্যের একটি বড় অংশই কৃষকরা মাঠ থেকে উত্তোলন করতে পারেনি। বন্দরে দিনের পর দিন ইউক্রেনের খাদ্যবাহী জাহাজ নোঙর করে থাকে। পরবর্তীতে তুরস্কের মধ্যস্থতায় জাতিসংঘের উপস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন খাদ্য রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ততদিনে আফ্রিকা এবং আরও কোনো কোনো অঞ্চলে খাদ্যভাব চরম আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানি তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। অয়েল অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) দেশগুলোরও জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধির পথে ধাবিত হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৭০ থেকে ৭৫ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছিল। সেই জ্বালানি তেলের মূল্য ১৩৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে বিশ্বের সর্বত্রই পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালি এবং স্থিতিশীল অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়, যা দেশটির বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে মূল্যস্ফীতি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা এসব দেশে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় কোনো দেশই অন্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারছে না।
এক দেশে কোনো কিছু ঘটলে তার অনিবার্য প্রভাব অন্য দেশেও গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ যেহেতু একটি আমদানিনির্ভর দেশ, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব খুব দ্রুতই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কার্যব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখনো ডাবল ডিজিটের নিচে রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি উত্থান-পতনের পর্যায়ে রয়েছে। গত অক্টোবর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর বিচ্ছিন্নভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এটা ছিল বিগত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।
নভেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কিছুটা কমেছে। সরকার মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে ২০২৪ সালের প্রথম কোয়ার্টার থেকেই মূল্যস্ফীতি কমে যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমান মুহূর্তে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সমস্যা এড়িয়ে যাবার পরিবর্তে স্বীকৃতি দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে মেনিফেস্টো ঘোষণা করেছে তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অঙ্গীকার করা হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহসাই কমিয়ে আনা হবে।
চলতি বছরের পুরোটা সময় জুড়েই বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করে। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) গত এক দেশ বছরের মধ্যে তাদের পলিসি রেট অন্তত ৭ বার বৃদ্ধি করেছে। সিডিউল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণকালে যে সুদ প্রদান করে তাকেই পলিসি রেট বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিশ্বের ৭৭টি দেশ তাদের পলিসি রেট বাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের পলিসি রেট বৃদ্ধি করে তাহলে সিডিউল ব্যাংকগুলোর ঋণ গ্রহণকালে বেশি সুদ দিতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিডিউল ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তা বা সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দানের ক্ষেত্রে বেশি হারে আরোপ করে। এতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আগের চেয়ে ব্যয় বহুল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে উদ্যোক্তা এবং সাধারণ ঋণ গ্রহীতা পর্যায়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়।
বাজারে অর্থ প্রবাহ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে বিক্রেতারা চাইলেই বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কয়েকবার পলিসি রেট বাড়িয়েছে। আগে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার (ব্যাংকগুলো তৃণমূল পর্যায়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে যে সুদ আরোপ করে) কিছুদিন আগ পর্যন্তও ৯ শতাংশে সীমিত রেখেছিল। ফলে ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি সুদে ঋণ গ্রহণ করে তা কম সুদে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয়। কিছু উদ্যোক্তা বা ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে নানা প্রক্রিয়ায় ঋণ গ্রহণের নামে ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। এই অর্থ কোনো না কোনোভাবে বাজারে চলে এসেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংকট এবং স্থানীয় পর্যায়ে নানা সমস্যা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে বলেছে, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাকে ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা খুবই আশাপ্রদ। উল্লেখ্য, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রক্ষেপণ করেছে। সেখানে বাংলাদেশ যদি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, তাহলে অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক। এই মুহূর্তে আমাদের মতো দেশের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা। সরকার সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দরিদ্র মানুষের জন্য তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল ইত্যাদি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে খাদ্য পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করছে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
সমস্যা আছে তারপরও বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিদায়ী বছরের অর্থনৈতিক সাফল্য জানতে হলে আমাদের অতীতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ শুধু একটি বছরের অবস্থা বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক হবে না। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে অর্জন করেছে, তা এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় চমকপ্রদ। একথা ঠিক যে দীর্ঘ একটা সময় মুক্তি যুদ্ধের যে অর্থনীতি তা বিপর্যস্ত এবং বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। কারণ রাজনীতিতে মুক্তি যুদ্ধের বিরোধী শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
সেই সময়টায় যে গবিব হিতৈষী, কৃষিবান্ধব, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বান্ধব যে অর্থনীতি বাংলাদেশে চালু হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেটা ১৯৭৫-পরবতী সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। মাত্র ৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে যে অর্থনীতি শুরু হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর আমলে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই প্রায় ২৬০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অনুপস্থিতির সময়ে দেশ আবারও পিছিয়ে যেতে থাকে। অর্থনীতি উল্টোপথে চলতে শুরু করে। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় পরের বছরই (১৯৭৬) ১৩৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। পরবর্তী বছরে তা আরও একটু কমে ১২৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। দীর্ঘ ১৩টি বছর লেগেছিল আমাদের সেই আগের পর্যায়ে পৌঁছুতে। সেই সময় বাংলাদেশ খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। সেই অগ্রগতি খুব একটা দৃশ্যমান ছিল না।
১৯৯০ সালের পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার জেগে উঠতে শুরু করে। তবে সেটা পুরোপুরি জেগে ওঠা বলা যাবে না। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিধৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। সেই উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে। সেই সময় মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় ছিল ৭০০ মার্কিন ডলারের মতো। এখন গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলারে উপনীত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণের মতো। অথচ ১৯৭২ সালের পাকিস্তানের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় আমাদের চেয়ে বেশি ছিল। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আমরা ২০১৫ সালেই পাকিস্তানকে অতিক্রম করে এসেছি। এমনকি গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের গড় জাতীয় আয় ভারতের চেয়েও বেশি। মূলত দুটি কারণে এই বিস্ময়কর অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রথমত, কৃষি, রপ্তানি এবং জনশক্তি রপ্তানি খাত আমাদেরকে শক্তি জুগিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজটি বঙ্গবন্ধুই প্রথম শুরু করেছিলেন।
গত ৫০ বছরে আমাদের দেশ শুধু মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় অর্জনের ক্ষেত্র এগিয়ে গেছে তা নয়, একই সময়ে দেশের অর্থনীতির আকার এবং পরিধি বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক আকার ছিল ৬ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখান থেকে আজকে অর্থনীতির আকার ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উপনীত হয়েছে। এটা অবশ্যই উৎসাহব্যাঞ্জক।’ ২০২৩ সাল মূলত সংকট উত্তরণের বছর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা থেকে উত্তরণের একটি লক্ষ্যণীয় প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয় বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও স্থানীয় বাজারে তার প্রভাব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্ফীতি ক্রমেই করতে শুরু করে। ২০২১ সালে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
কিন্তু পরে সেই রিজার্ভের স্ফীতি কমে আসতে শুরু করে। আমদানি খাতে বেশি ব্যয়, রপ্তানি আয় প্রত্যাশা মোতাবেক বৃদ্ধি না পাওয়া এবং আহরিত রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা কমে যাবার কারণেই মূলত এই সংকটের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করায় বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫০২ কোটি মার্কিন ডলার। আর আইএমএফের শর্তানুযায়ী বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার। ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ১হাজার ৯১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৪৬২ কোটি মার্কিন ডলার ও ১ হাজার ৯১৬ কোটি মার্কিন ডলার। ২১ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৬০৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২ হাজার ৬৮ কোটি মার্কিন ডলার। ২৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ বছর শেষ হবার তিন দিন আগে রিজার্ভ ছিল যথাক্রমে ২হাজার ৬৪ কোটি মার্কিন ডলার ও ২ হাজার ১৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ কিছুটা ধীরগতিতে হলেও রিজার্ভ বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে শুরু হলে রিজার্ভের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন।
রিজার্ভ কমে যাবার একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা কমে যাওয়া। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার যে বিনিময় হার পাওয়া যায়, কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তার থেকে অন্তত ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিচ্ছেন। স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করছেন। মূলত এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ কমে আসছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের ওপর দেয়া নগদ আর্থিক প্রণোদনার পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে। আগে প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হতো। এখন তা ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর এখন নগদ ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাচ্ছে। আর্থিক প্রণোদনা বাড়ানোর পর প্রাবাসীদের অর্থ প্রেরণের হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে, আগামী কিছু দিনের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানলে প্রবাসী আয় আসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স অর্জন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে সপ্তম স্থান ধরে রাখতে পারবে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে সপ্তম স্থানে ছিল। এ বছরও সেই অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান থাকবে সপ্তম। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ মোট ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে। ২০২৩ সালে ভারত ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে শীর্ষ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশের মর্যাদা লাভ করবে। মেক্সিকো ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চীন ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রবাসী আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কারণ এই খাতের কোনো কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় না। ফলে অর্জিত অর্থের প্রায় পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করছে। একই সঙ্গে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করছে। তবে জনশক্তি রপ্তানি খাতের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা যে জনশক্তি রপ্তানি করি তার বেশির ভাগই অদক্ষ এবং অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক। ফলে তারা বিদেশে গিয়ে নানা সমস্যায় পতিত হন। প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে এই খাতের আয় আরও বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। বৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে মোটামুটি সাফল্য অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি মার্কিন ডলার। আগের বছর একই সময়ে এই খাতের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭৫শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাস এবং আগের অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসের রপ্তানি চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪৫৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৪৭৮ কোটি মার্কিন ডলার ও ৪৬১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৩১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।
অর্থাৎ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি করা হয় ৩৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত নভেম্বর মাসে রপ্তানি করা হয় ৪৭৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি করা হয়েছিল ৫০৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে রপ্তানি বিঘ্নিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্ফীতি হ্রাস প্রতিরোধ কল্পে বাংলাদশে ব্যাংক নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আগরে বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ পত্র খোলার হার কমেছে ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মূলধনী যন্ত্রপাতিতে ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জ্বালানি ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্যে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, কাঁচামাল আমদানিতে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ঋণ পত্র খোলার হার কমেছে।
ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে বছরের শুরুতেই এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। মহল বিশেষ উদ্দেশ্য মূলকভাবে গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্ট গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে নেয়। ফলে কিছু কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পতিত হয়। গত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। জুন মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। জুলাই মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে এটা ছিল ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে এটা ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। আগামীতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাড়িয়েছেন। ২০১৮ সালে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা। এখন তা ১২ হাজার ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক মিল্প শ্রমিকদের মজুরির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। চীনে একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মাসিক মজুরি হচ্ছে ৩০০ মার্কিন ডলার। ইন্দোনেশিয়ায় ২৪২ দশমিক ৯৪ মার্কিন ডলার। ভিয়েতনামে এটা ১৭০ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। ভারত ও কম্বোডিয়ায় এটা যথাক্রমে ১৭১ দশমিক ১৮ মার্কিন ডলার ও ২০০ মার্কিন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ১১৩ মার্কিন ডলার। শ্রমিকদের মজুরির হার তুলনামূলকভাবে কম হবার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যানের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ মোট ১৮৯ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। ২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৩ সালে যথাক্রমে ৮৯৩ কোটি মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৪৮৫ কোটি মার্কিন মার্কিন ডলার এবং ২ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৩ হাজার ২৯৩ কোটি মার্কিন ডলার ও ৪ হাজার ৫৭১ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ চীনকে অতিক্রম করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তাকিরাক দেশে পরিণত হয়েছে। দেশ বর্তমানে ৪ হাজার ১১৪টি কারখানায় তৈরি পোশাক উৎপাদিত হচ্ছে। এতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ লাখ ৩ হাজার ৫১৭জন। দেশে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে তাতে ২০২৩ সালে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মেট্রোরেল চালু হয়েছে। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু ট্যানেল উদ্বোধন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু তো আগেই চালু হয়েছে।
সব মিলিয়ে ২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় বছর হয়ে থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এটাই সবার কামনা।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে