Views Bangladesh Logo

হতাশাগ্রস্ত ঢাবির যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীন যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা হতাশার করাল গ্রাসে ডুবে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিভাগের চেয়ারপারসন সহকারী অধ্যাপক শারমিন আহমেদ। আর এর পেছনে তিনি আইনের মারপ্যাঁচকে দায়ী করছেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১৮ অনুযায়ী স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি প্র্যাকটিস করতে হলে থাকতে হবে বিএসসি ডিগ্রি। ২০১৮ সালে প্রণীত রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের একটি ধারায় ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট’-এর যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে একমাত্র এই বিষয়ের ওপর বিএসসি ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এদিকে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন বিএসএস (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স) ও এমএসএস (মাস্টার অব সোশ্যাল সায়েন্স) ডিগ্রি। ফলে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করে এক বছরের ইন্টার্নশিপ শেষ করেও এই শিক্ষার্থীরা স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি প্র্যাকটিস করতে পারেন না।

শারমিন আহমেদ ভিউজ বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে স্পিচ থেরাপিস্ট হতে চায়, কারণ তাদের সে যোগ্যতা আছে। তারা এনাটমি, ফিজিওলজি নিয়েও পড়াশোনা করে; কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে তাদের সে সুযোগ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তারা যদি সেবা দিতে চান তবে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং তাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকিও থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আশার আলো চট্টগ্রাম’, ‘প্রয়াস’, ‘হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘ইনার সার্কেল প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র বিএসসি ডিগ্রি চেয়েছে যার ফলে ঢাবির বিএসএস ডিগ্রিধারীরা প্র্যাকটিসের সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।’

তিনি অভিযোগ করেন, এই আইন করার পেছনে সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-সহ কিছু প্রতিষ্ঠানের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।

তিনি বলে, ‘সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-সহ কিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের বিভাগের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব পোষণ করে আসছে। এটি একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। যেখানে কিছু গোষ্ঠী নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখতে চায়। আমাদের শিক্ষার্থীরা কম খরচে ভালো সেবা দেয় আর সেটাই কিছু গোষ্ঠীর সহ্য হয় না।’

তিনি আরও জানান, ‘বাংলাদেশ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট সোসাইটির সভাপতি ফিদা আল শামস, বিআরসির সাবেক উপ-রেজিস্টার সৈয়দ মেহেদী হাসান, সিআরপির নির্বাহী পরিচালক সোহরাব হোসেন এবং বিওটিএ (বাংলাদেশ অকুপেশনাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ এই আইন করার পেছনে সব কলকাঠি নাড়েন।’

এদের মধ্যে বিআরসির সাবেক উপ-রেজিস্টার মেহেদী হাসান অবসরের আগে তড়িঘড়ি করে আইন পাস করে নিয়েছেন যাতে বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ এই সেক্টরে না আসতে পারে, তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিচ অ্যান্ড থেরাপিস্ট সোসাইটির সভাপতি ফিদা আল শামস ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি একটি পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আইন আমি একা করিনি। আইন করেছে সরকার। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি ২০০৭ সাল থেকে মেডিসিন ফ্যাকাল্টির আন্ডারে কোর্সটি চালু হয়ে আসছে। আইনে বলা আছে কেউ যদি স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট হতে চায় তাহলে তাকে চার বছর মেয়াদি একাডেমিক ও এক বছরের ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছরের স্পিচ থেরাপির ল্যাংগুয়েজ কোর্সটি করতে হবে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কোর্সটি আইনের আলোকে পরিচালিত না হয়ে ভিন্নভাবে পরিচালনা হচ্ছে। এটি একটি স্বাস্থ্যপেশার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই জন্য আমরা ২০১৮ সালে আদালতে এই আইনটি উপস্থাপন করি এবং আমরা বলি যে বিএসএস বা বিএ ডিগ্রিধারী স্টুডেন্টরা যেন আবেদন করতে না পারে। এরপর ২০১৮ সালেই সবকিছু বিবেচনা করে আদালত আইনটির রায় দেন।’

তিনি আরও জানান, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই, শুধু আমাদের পেশাটি নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারেন সেই জন্য আমরা আইনটি করেছি।’

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিভাগটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে চিঠি দিলেও এখনো কোনো উত্তর পায়নি।

‘বিএসসি ছাড়া কেউ এই পেশায় প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানানো হচ্ছে। অথচ বাস্তবে বিএসএস ডিগ্রিধারীরা স্নায়বিক রোগীদের মনিটরিংয়ে আরও দক্ষ,” বলেন শারমিন আহমেদ।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদী মোহাম্মদ বলেন, ‘সিআরপি আগে একমাত্র ডিগ্রি দিত। এখন তারা আমাদের বিভাগ থেকে কেউ যেন সনদ না পায়, সেই চেষ্টা করছে। তারা মনে করে আমাদের উপস্থিতি তাদের মার্কেটিং ভ্যালু কমিয়ে দেবে।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্বজুড়েই বিএসসি, বিএসএস ও বিএ ডিগ্রিকে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়; কিন্তু বাংলাদেশে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ডিগ্রিকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়া হচ্ছে যা অন্যায্য।

২০১৮ সালের রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইনকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, এই আইনের খসড়া তৈরিতে ঢাবির যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- বৈষম্যমূলক ধারা সংশোধন, ৩২ সদস্যবিশিষ্ট কাউন্সিল পুনর্গঠন, বিভাগবিরোধী রিট প্রত্যাহার এবং বিভাগের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নীতিমালা বা সনদ অনুমোদন না দেয়া।

তারা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও, আইওয়া, ম্যারিল্যান্ড, ওয়েইন স্টেট ও সেন্ট জনস বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয় এবং লেবাননের ফোনিসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিষয়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস এবং মাস্টার অফ আর্টস ডিগ্রি দেয়া হয়। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের বিভাগ কেন পেছনে পড়ে থাকবে?

তারা বলেন, এই সমস্যার সমাধানের সম্ভাব্য পথ দুটি এক যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগকে বিএসএস থেকে বিএসসিতে স্থানান্তর করা; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। তাই হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এই আইন সংশোধন করতে হবে অথবা শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টে রিট করতে হবে যা অনেক ব্যয়বহুল।

তবে শারমিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের বিভাগের পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ