জার্মানিতে নির্বাচন, রক্ষণশীলদের জয়ের সম্ভাবনা
জাতীয় পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন জার্মানরা। গত বছরের নভেম্বরে বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির জোট ভেঙে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের ছয়মাস আগেই নির্বাচন হচ্ছে।
রোববারের (২৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনের প্রাক্কালে জরিপে দেখা গেছে, ফ্রেডরিখ মের্ৎসের নেতৃত্বে রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন ইন ব্যাভারিয়ার (সিএসইউ) জোটের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তবে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক সমর্থিত কট্টর ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানিরও (এএফডি) দ্রুত উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে, শলৎসের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির সমর্থন আছে মাত্র ১৫ শতাংশ।
জার্মানির খণ্ডিত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে কোনো দল বা জোটের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা কম। ফলে বিজয়ীদের জোট গড়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে নির্বাচিত হলে সরকার গঠনে এএফডির সঙ্গে জোট গড়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন জরিপে এগিয়ে থাকা মের্ৎস। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বা গ্রিন পার্টির সঙ্গে তিনি জোট করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মের্ৎস দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘বামপন্থার অবসান হয়েছে...জার্মানিতে আর কোনো বামপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, আর বামপন্থী রাজনীতিও আর নেই’।
অভিবাসন কঠোর করা, কল্যাণ ভাতা কমানো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির প্রভাব পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতিতে ভোটে লড়ছেন ফ্রেডরিখ মের্ৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপকে আবার শক্তিশালী হতে এবং জার্মানিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে’।
অভিবাসন এবং নাৎসি অতীতের কারণে অতি-ডানপন্থী রাজনীতি বিশেষভাবে শক্তিশালী কলঙ্ক বহনকারী জার্মানিতে ওলাফ শলৎসের এএফডির সাথে সম্ভাব্য জয়ীরা কীভাবে মোকাবিলা করবেন, তা নিয়েও চলছে তীব্র বিভাজন। তাই সরকার গঠনে জোট গড়ার আলোচনা জটিল হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
এর ফলে অজনপ্রিয় চ্যান্সেলর শলৎসকে কয়েক মাস ধরে তত্ত্বাবধায়ক ভূমিকায় রেখে দেয়াও হতে পারে। টানা দুই বছরের সংকোচন এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর ইউরোপের বৃহত্তম এই অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় নীতিগুলোর বাস্তবায়নও বিলম্বিত হতে পারে।
এটি ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করবে। কারণ, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি এবং ইউরোপীয় সম্পৃক্ততা ছাড়াই ইউক্রেনের জন্য দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
ঝুঁকিপূর্ণ রপ্তানিমুখী অর্থনীতির নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই নির্ভরশীল জার্মানি।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে জার্মানরা এখন তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে অনেক বেশি হতাশ। জরিপকারী গ্যালাপের মতে, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া নিয়ে আশাবাদীদের হার ২০২৩ সালের ৪২ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
২০১৫ সালে ইউরোপের অভিবাসী সংকটের সময় ‘শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর’ সংস্কৃতি থেকে সরে এসে জার্মান জনসাধারণের মনোভাবেও গভীর পরিবর্তন এসেছে। অভিবাসনের প্রতি মনোভাবও কঠোর হয়েছে তাদের।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে