Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

রাষ্ট্র সংস্কারে তৃণমূলের মানুষকে প্রাধান্য দিন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কার্ল মার্কসের মতে, রাষ্ট্র মূলত শোষণের হাতিয়ার, শ্রেণি শোষণের যন্ত্র। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে দুর্বল শ্রেণির ওপর বিত্তবান শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠান রাখার অর্থনৈতিক সংগঠন হলো রাষ্ট্র। মাকর্সের ভাষায়, গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে আধুনিক রাষ্ট্র বুর্জোয়া শ্রেণির একনায়কত্ব ছাড়া অন্য কিছু নয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এখন চারদিকে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। অনেকে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিতে চাচ্ছে। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অনেক বিষয় সামনে আসছে। বেতন বাড়ানোর দাবিতে, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলন করছে। এখনো শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে পোশাক কারখানাগুলোতে; কিন্তু একটি পুঁজিবাদী সমাজে বৈষম্য আসলে কতখানি ঘোচানো সম্ভব?

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ‘সকলে মিলে সমতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ গত সোমবার রাজধানীর এক হোটেলে। ওই সভায় বক্তারা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও পরিকল্পনায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন। নতুনভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের এই যাত্রায় প্রাধান্য দিতে হবে বৈষম্যের শিকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দাবিকে।

তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী, প্রতিবন্ধী সমাজ প্রতিনিধি, যৌনকর্মী সমাজের অধিকার কর্মী, যুবক এবং নারী অধিকার কর্মী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক, জলবায়ু কর্মী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দলিত-হরিজন সম্প্রদায়সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ২০ জনের অধিক প্রতিনিধি।

বক্তারা বলেন, জাতীয় উন্নয়নে নারীদের কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারি সেবাসহ কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি, দলিত-হরিজন ও যৌনকর্মীদের সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার মূল্যায়ন ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জেন্ডার সংবেদনশীল ও ন্যায্যতার সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে হবে।

নিঃসন্দেহে এই উদ্দেশ্য ও উদ্যোগ ভালো; কিন্তু সীমাহীন বৈষম্য কীভাবে এবং কতটুকু নিরসন হবে সেটাই আলোচ্য বিষয়। বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রেই নানারকম বৈষম্য বিরাজমান। এদেশের সাধারণ শ্রমিক-কৃষক যেমন একদিকে বঞ্চিত, তেমন নানা নিম্ন আয়ের মানুষও দীর্ঘকাল ধরে অবহেলা-বঞ্চনার শিকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভাজন; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরও দেখা গেছে সেই পুরোনো আমলাতান্ত্রিক কাঠামো বিদ্যমান।

এখনো সেই আমলাতন্ত্র বহাল তবিয়তে আছে। একদিকে সরকারি কর্তকর্তা-কর্মচারীরা নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষ সারাজীবন কেবল খেটেই মরে। আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিম্নআয়ের কর্মচারীদেরও বিপুল ব্যবধান। এর সঙ্গে নারীরা, বিশেষত শ্রমিক নারীরা আরেকভাবে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার কাতারে দলিত-হরিজন সম্প্রদায়ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে অন্যভাবে। সব মিলিয়ে বৈষম্যমের মাত্রা ও পরিধি আসলে নানাবিধ। এই বৈষম্য ঘোচানো না গেলে দেশে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবে না।

তারপরও এখন রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে নানারকম আলোচনা হচ্ছে, যেটা এক আশার আলো জ্বালাচ্ছে। মানুষ আশাবাদী প্রাণী, আশাই জীবনের একমাত্র ভেলা। এই ভেলাই মানুষকে সব সময় পরিচালিত করে সামনের দিকে। বাংলাদেশে সমাজবিপ্লব হয়নি, তাই সমাজের আমূল সংস্কার হবে, সবকিছু রাতারাতি বদলে যাবে এমন বড় আশা আমরা করি না। খুব বড় আশা না করলেও আমরা এতটুকু চাই, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক হোক।

যতটা পারা যায় বৈষম্য ঘোচানো হোক। যেন খেটে খাওয়া মানুষ দুবেলা পেটপুরে খেতে পারে। তাদের জীবনমান ও সামাজিক নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত থাকে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের দাবি, এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কথা মনে রাখবেন। হাজার বছর ধরে মার খেতে খেতে তারা টিকে আছে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও যেন মর্যাদা পায়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ