রোহিঙ্গাদের অর্থ সহায়তা কমায় প্রশ্নবিদ্ধ বৈশ্বিক উদ্যোগ
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে আসছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সহায়তা কমতে শুরু করে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলোর মনোযোগ এখন যুদ্ধের দিকেই নিবিষ্ট। তাই রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি গভীরতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে
গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা তহবিল কমছে। ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা চেয়ে পাওয়া গেছে এর ৫০ শতাংশ। মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে আসছে জাতিসংঘ। ২০১৭ সালে থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য জেআরপি নামের মানবিক সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরের জেআরপিতে অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা, সম্মানজনক আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশন (ওয়াশ) সেবা। খসড়া জেআরপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তায়।
ছয় বছর আগে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হত্যা ও নিপীড়নে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তার আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও কয়েক লাখ। কক্সবাজার, টেকনাফ ও ভাসানচরের ক্যাম্পগুলোতে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যার ভার বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা কঠিন। অথচ পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা কবে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে, সে কথা কেউই বলতে পারছে না। এ নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তারও কোনো গতি নেই।
এদিকে মানবিক সহায়তা তহবিল কমিয়ে দেয়ার ফলে শরণার্থী শিবিরে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা হতাশ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানব পাচারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। আবার বর্তমান সময়ে মাদকের যে ভয়াবহতা চলছে, তাতেও জড়িয়ে পড়তে পারে রোহিঙ্গারা। দাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা না পাওয়া এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতাসহ নানা সমস্যা নিয়ে এমনিতেই বাংলাদেশ সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এরই মধ্যে মানবিক সহায়তা তহবিল কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা রোহিঙ্গা সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে আমরা মনে করি।
এ ধরনের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। সে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল, চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেয়া এবং সংকটকালে তাদের পাশে আরও শক্তভাবে দাঁড়ানো। মনে রাখা দরকার, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাজ করার সুযোগ নেই এবং তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে