Views Bangladesh Logo

গাজার গণহত্যা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ব স্থবির থাকুক

পৃথিবী এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের প্রভূত বিকাশ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান পৃথিবীতে যুদ্ধ-হানাহানি-রক্তপাত লেগেই আছে। প্রতিটি যুদ্ধ মানুষের সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়- সত্যিই কি মানুষের কোনো বোধবুদ্ধি জাগ্রত হয়েছে? এত রক্তপাত দেখার পরও কেন মানুষের হুঁশ হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখার পর মানুষ মানুষ শব্দটার ওপরই আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল।

দার্শনিক মিশেল ফুকোর মতো ব্যক্তি লিখেছিলেন, মানুষ শব্দটা বালির ওপর লেখা, সমুদ্রের যে কোনো একটি ঢেউ এসে সেটা মুছে দেবে; কিন্তু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা পাপ। তাই শেষ পর্যন্ত মানুষই এসে দাঁড়াল মানুষের পাশে। গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়াল বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। গাজার চলমান গণহত্যা বিশ্ববিবেককে জাগিয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে লাখ লাখ মানুষ। তারা গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল (৭ এপ্রিল) বিশ্ববাসী ডাক দিয়েছিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’। বিশ্বমিডিয়ার বরাতে জানা যায়, গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। গতকাল সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির ব্যাপারে হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’, অর্থাৎ ‘গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ’ নামে গতকাল সোমবার বিশ্বজুড়ে এ অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ডাকে সাড়া দিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ক্লাস বর্জন করেছে।

গাজার গণহত্যা কিন্তু চলছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০-এর অধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। ফলে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০। শক্তিশালী বোমার আঘাতে মানুষের দেহ আকাশে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য বিশ্ববাসীকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এমন বর্বরতা সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ আর দেখেনি।

তারপরও অন্ধকারের মধ্যে আলোর রেখাও দেখা যায় কখনো কখনো। বিশ্ববিবেক জাগ্রত হওয়ায় আলোর দিশা দেখা যাচ্ছে। গাজার গণহত্যা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ব স্থবির থাকুক। যদি এই যুদ্ধ বন্ধ না করা যায় তাহলে মানুষের সভ্যতা বিফলে যাবে। দুঃখের বিষয়, অনেক মুসলিম দেশ গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়ায়নি। সব দেখেও তারা নীরব। ইতিহাসের কাঠগড়ায় অবশ্যই একদিন তাদের দাঁড়াতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ