Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

প্রয়োজনীয় আনুকূল্য পেলে স্বর্ণশিল্প দেশের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে

Md. Anwar  Hossain

মো. আনোয়ার হোসেন

রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের স্বর্ণালঙ্কার শিল্পের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। স্মরণাতীত কাল থেকে বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীরা উন্নতমানের নানা ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করে চলেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি স্বর্ণালঙ্কার বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বিশ্বের হাতে তৈরি স্বর্ণালঙ্কার শিল্পীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাংলা ভাষাভাষি। ভারতে যে সব বাংলা ভাষাভাষি স্বর্ণারঙ্কার তৈরি সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে অভিবাসনকারী। বাঙালি শিল্পীদের হাতে তৈরি স্বর্ণালঙ্কারের কোনো বিকল্প এখনো সৃষ্টি হয়নি।

বিশ্বব্যাপী নারীদের সবচেয়ে পছন্দের গহনা হচ্ছে স্বর্ণালঙ্কার। স্বর্ণালঙ্করের ব্যবহার এবং চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর কোথাও এমন কোনো নারী সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি স্বর্ণালঙ্কার পছন্দ করেন না। স্বর্ণালঙ্কার শুধু যে নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই নয় এটা মূল্যবান সম্পদও বটে। অনেকেই আছেন যারা আপদকালীন সময়ের জন্য স্বর্ণালঙ্কার সংরক্ষণ করে থাকেন। স্বর্ণের বহুমুখী ব্যবহার পৃথিবীর সর্বত্রই প্রত্যক্ষ করা যায়। স্বর্ণালঙ্কার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার কাছেই সমাদৃত। ফলে আগামীতেও স্বর্ণালঙ্কার চাহিদা কখনোই কমবে না। বরং দিন দিনই তা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

বাংলাদেশের শিল্পীরা তুলনামূলক কম খরচে উন্নতমানের স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করতে সক্ষম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেমন স্বর্ণালঙ্কারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সীমিত পরিসরে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে স্বর্ণ শিল্প দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে; কিন্তু নানা সমস্যার কারণে এই শিল্প সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারছে না। সরকারি পর্যায় থেকে অনুকূল নীতি সহায়তা এবং আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হলে স্বর্ণালঙ্কার শিল্প পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারবে। অনেকেই মনে করেন, সার্বিক সহায়তা পেলে স্বর্ণ শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের মতোই দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, প্রয়োজনীয় আনুকূল্য পেলে স্বর্ণশিল্প দেশের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, যা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। আমরা অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির চেষ্টা করে চলেছি; কিন্তু খুব একটা সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। কারণ আমরা স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক এবং যুগোপযোগি কোনো পলিসি নেই। অথচ বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনকারী বাঙালি করিগর দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করে ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ভারতীয় কারিগরদের হাতে তৈরি স্বর্ণালঙ্কারের সুনাম বিশ্বব্যাপী। অথচ ভারতে যারা হাতে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করছেন তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনকারী স্বর্ণশিল্পী। কাজেই আমাদের দেশে যারা হাতে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করেন তাদের সেই পণ্য খুব সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নিতে পারে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বের স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৮৯৯ টন। এর মধ্যে জুয়েলারির চাহিদা ছিল ২ হাজার ৯২ দশমিক ৬ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের জুয়েলারি রপ্তানি খাতের আয় ছিল ৩৮ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জানুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতে ভারতের আয় হয়েছিল ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী জুয়েলারি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৫৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মাত্র ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে জুয়েলারি রপ্তানি বাবদ। ২০১৮ সালে জাতীয় স্বর্ণ নীতিমালা (সংশোধিত) প্রণয়ন করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হলে আমাদের প্রথমেই এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ব্যবস্থা সহজীকরণ করতে হবে স্বর্ণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে পাকা সোনা। বাংলাদেশের কোনো স্বর্ণের খনি নেই। তাই আমাদের বিদেশ থেকে পাকা/ ২৪ ক্যারেট সোনা আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের চাহিদা এবং মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এই শিল্পের উৎপাদন ব্যয় আগের যে কোনো সমযের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় এবং নীতি সহায়তা দেয়া হলে এই শিল্পের বিকাশের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। সরকারিভাবে স্বর্ণ আমদানি করা হয় না। ব্যাংকও স্বর্ণ আমদানির জন্য ঋণ প্রদান করে না। ব্যাগেজ রুলের আওতায় যে সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ আমদানি করা হয় আমাদের তার ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। ব্যাগেজ রুলে আওতায় ১০০ গ্রাম স্বর্ণ আনা যায় গয়না ফর্মে। আর আসে ১০ ভরি এক পিচ করে স্বর্ণের বার। এই ১০ ভরি স্বর্ণের জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। অর্থাৎ প্রতি ভরিতে ৪ হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। প্রতি ভরিতে ৪ হাজার টাকা করে শুল্ক দেবার ফলে স্বর্ণালঙ্কার উৎপাদন ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারের স্বর্ণালঙ্কারের মূল্যের পার্থক্য হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ স্বর্ণ আমদানিতে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় আমাদের ব্যয় বেশি পড়ে ৯ হাজার টাকা। বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে বিক্রি করে কোনোদিনই ব্যবসায় করা যায় না। অর্থনীতির কোনো সূত্রই এটা সমর্থন করে না। ফলে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কম। তাই তারা ইচ্ছা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করতে পারেন না। উল্লেখ্য, স্বর্ণালঙ্কার শুধু মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজেই ব্যবহৃত হয় না, এটা এক ধরনের সম্পদও বটে। অনেকেই দুর্দিনের অবলম্বন হিসেবে স্বর্ণালঙ্কার সংরক্ষণ করে থাকেন।স্বর্ণালঙ্কারের উচ্চ মূল্যের কারণে অধিকাংশ মানুষই এখন আর স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করতে পারছেন না। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এই ব্যবসায় এখন কিছুটা হলেও মন্দা বিরাজ করছে।

কিন্তু শুধু ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা স্বর্ণ দিয়ে এত বড় একটি শিল্প খাত কখনোই পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না। স্বর্ণালঙ্কার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে স্বর্ণ আমদানির ব্যবস্থা উন্মক্ত করা হলে এ শিল্পের সমস্যা অনেকটাই সামাল দেয়া সম্ভব হতো। বাংলাদেশ স্বর্ণ আমদানির জন্য উচ্চ হারে মূল্য সংযোজন কর আরও করা হয়। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রিতে ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর প্রদান করতে হয়। অথচ পাশবর্তী দেশ ভারতে স্বর্ণ আমদানিতে ৩ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর দিতে হয়। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় স্বর্ণালঙ্কার বিক্রিতে আমাদের চেয়ে অনেক কম মূল্য সংযোজন কর দিতে হয়। মূল্য সংযোজন কর এবং অন্যান্য ব্যয় বেশি হবার কারণে আমাদের এখানে স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য পাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের দেশের এক শ্রেণির বিত্তবান মানুষ আছেন, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে গমন করেন। তারা দেশে ফেরার সময় ভারত থেকে তুলনামূলক কম মূল্যে স্বর্ণালঙ্কার কিনে আনেন। এতে দেশের শিল্প বিকশিত হবার পথ রুদ্ধ হচ্ছে। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এই খাতে। আমাদের দেশে তৈরি গয়নাগুলো হাল্কা ওজনের ছোট ছোট ডিজাইনের। আমরা এসব অলঙ্কার বিক্রি করতে পারিনি। সামর্থ্যবান বড় বড় বায়ারগণ পাশের দেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার কিনে নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশ স্বর্ণালঙ্কার শিল্পের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বাংলাদেশে বার্ষিক স্বর্ণের চাহিদা অনুমানিক ২০০ টনের মতো, যার মূল্য প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাগেজ রুলের আওতায় ৫৪ টন স্বর্ণ আমদানি করা হয়। আগে ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী প্রতি ভরিতে ২ হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়ে ২০ ভরি স্বর্ণ আনতে পারতেন। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) একজন যাত্রী ১০ ভরি পর্যন্ত স্বর্ণ আনতে পারছে। এ জন্য ভরিপ্রতি ৪ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে ডায়মন্ড শিল্পের চমৎকার সম্ভাবনা রয়েছে। রাফ/আনকাট ডায়মন্ড আমদানি করে তা স্থানীয়ভাবে পলিশ ও কাটিং করে বাজারজাত করতে হয়। এজন্য উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে ডায়মন্ড শিল্পের জন্য দক্ষ বিশেষজ্ঞ আছেন। তারা দক্ষতার সঙ্গে এই শিল্পের জন্য কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ডায়মন্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্প বিকশিত হবার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে উচ্চ শুল্কহার। বাংলাদেশে রাফ/আনকাট ডায়মন্ডের উপর ৭০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়। ভারতে এই শুল্কহার মাত্র ৫ শতাংশ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ডায়মন্ড শিল্প বিকাশের জন্য নানাভাবে সহায়তা দিয়ে চলেছে। ফলে ভারতের ডায়মন্ড শিল্প এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডায়মন্ড শিল্পে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ যখন ভারত ভ্রমণে যান তখন সেখান থেকে ফিনিশড ডায়মন্ড নিয়ে আসেন। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশেও বড় আকারের ডায়মন্ড শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব।

আমরা বাজুসের পক্ষ থেকে বারবারই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব দিয়েছি স্বর্ণালঙ্কার শিল্পের জন্য মূল্য সংযোজন করের হার কমিয়ে এর পরিধি বাড়ানো হোক; কিন্তু আমাদের সেই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ভারতের মতোই বাংলাদেশের স্বর্ণ আনার ওপর যদি ৩ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হতো তাহলে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। ভোক্তরা তখন অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করবে। স্থানীয় ক্রেতাদের উপেক্ষা করে কোনো শিল্প কখনোই বিকশিত হতে পারে না। যে কোনো শিল্প পণ্য রপ্তানি করা যেতে পারে। তবে সবার আগে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা সৃষ্টি বা বাড়ানোর জন্য দুটি কাজ করা খুবই জরুরি তাহলো, উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো এবং মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এখন অভ্যন্তরীণ বাজারেও যে কোনো পণ্যকে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে কোনো পণ্যই বাজারে টিতে থাকতে পারবে না। এটা অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য যেমন সত্যি আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে কাঁচা স্বর্ণ পাওয়া যায় না। বিদেশি থেকে নানাভাবে স্বর্ণ আনতে হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্পগোষ্ঠী গোল্ড রিফাইনারি প্রকল্প স্থাপন করছে। এই প্রকল্পে মাধ্যমে আমরা স্বর্ণালঙ্কার শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পেতে পারি। তবে এ জন্য বিদেশ থেকে আকরিক সোনা আমদানির ব্যবস্থা উন্মুক্ত করতে হবে। কারণ রিফাইনারি চালু হবার পর যদি তারা কাঁচামাল না পায় তাহলে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। বাংলাদেশে রিফাইনারি প্রকল্প চালু হবে এর মাধ্যমে স্বর্ণ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারের কাঁচামাল জোগান দেবার পরও তা বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খনিজ/আকরিক স্বর্ণ আমদানির অনুমতি দিতে হবে। তাহলে আমরা বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণের কাঁচামাল রপ্তানি করতে পারব।

সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এসব দেশ আন্তর্জাতিক স্বর্ণালঙ্কার বাজার দখল করে আছে। তাদের জাতীয় আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জিত হয় স্বর্ণবার শিল্প থেকে। এসব দেশ বাংলাদেশের তুলনা অনেক কম খরচে স্বর্ণালঙ্কার উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারছে; কিন্তু আমরা তা পারছি না। বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত অলঙ্কার হচ্ছে স্বর্ণালঙ্কার। স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা কখনোই কমবে না। আগামীতেও এই শিল্পের সম্ভাবনা অটুট থাকবে। এই দেশে যে কোনো শিল্প বিকশিত হতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রপ্তানি খাত। এর বাইরে আর কোনো সম্ভানাময় খাত আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং সাপোর্ট পাওয়া যায় তাহলে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি পোশাক ও জনশক্তি রপ্তানি খাতের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বিকল্প খাত হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।


লেখক: চেয়ারম্যান, ট্যারিফ-ট্যাক্স স্ট্যান্ডিং কমিটি ও নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ