Views Bangladesh Logo

তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলে সদস্য সচিব পদ নিয়ে বিভাজনের গুঞ্জন

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন ঘিরে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলছে বিভক্তির গুঞ্জন। এতে হতাশ জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রজনতা। তবে এটিকে রাজনীতির নিয়মিত বিষয় এবং নেতৃত্বের গভীরতার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করছেন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে উচ্চকিত ছাত্রনেতারা।

প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হবে নতুন এই দলের আহ্বায়ক কমিটি। পরে আসবে কার্যনির্বাহী কমিটি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকার সংগঠকরা জানিয়েছেন, কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নম্বর সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। দলের দায়িত্ব নেয়ার আগেই নাহিদ উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে সমস্যা বেধেছে সদস্য সচিব বা দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদটি নিয়ে। এ পদের দাবিদার জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বড় ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহবুব আলম মাহির- এই পাঁচজনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা পক্ষ-বিপক্ষ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে নাগরিক কমিটির একজন শীর্ষনেতা জানান, সদস্য সচিব পদটি নিজেদের হাতে রাখতে ছাত্রনেতারা বিভক্ত অন্তত তিনটি কোরাম বা অংশে। একটি বামধারা থেকে আসা ছাত্রনেতাদের, দ্বিতীয়টি সাবেক শিবির নেতাদের এবং তৃতীয়টি মোটা দাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের গ্রুপ, যারা মূলত ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা ছাত্রশক্তিতে জড়িত ছিলেন।

আখতারকে চাওয়া নাগরিক কমিটির অংশটি মূলত ২০২৩ সালে গড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির একাংশ এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের অনুসারী। তাদের মধ্যে রয়েছেন সমন্বক হান্নান মাসুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং আব্দুল্লাহ হিল বাকির মতো শীর্ষ নেতারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আখতারের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম, আন্দোলনে গ্রেপ্তার ও ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করে চলেছেন তারা।

সূত্র বলছে, নতুন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডে সাবেক শিবির নেতা আলী আহসানকে আনতে চেষ্টা করছেন জামায়াতপন্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক কমিটির এক নেতা বলেন, আখতারের উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে করা হয়নি। নতুন রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভূক্তিমুলক করতে গিয়ে এখানে নানা মতের তরুণদের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। শিবির চাচ্ছে, তাদের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে আসুন। বামরাও দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য প্রথমে আখতারকে নেতা হিসেবে সমর্থন দেন। তবে এখন তারা একেবারে নিশ্চুপ, বলা যায়, সরেই গেছেন।

ছাত্রশক্তিও এককভাবে আখতারকে চায় না। এর কারণ হিসেবে ওই নেতা বলেন, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না। আর তাই উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের অনুসারীরা চান, এ পদে মাহফুজের বড় ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহবুব আলম মাহিরকে। বামদের সমর্থনও তিনি কিছুটা পাচ্ছেন। তিনি সদস্য সচিব হোন বা না হোন, ভবিষ্যতে এই দলে তার বড় অবস্থান থাকবে এটা নিশ্চিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ এক নেতা বলেন, দল গোছানোর আগেই এমন আস্থার সংকট তৃণমূলে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধক্তা এবং বিতর্ক এড়াতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনই প্রধান এবং একমাত্র পথ। সমস্যা হয়, যখন কেউ এ পদে একমাত্র নিজেই যোগ্য বলে ধরে নেন, অন্যদের সহ্য করতে পারেন না।

তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চিন্তা থাকলে, ভালো কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনই উত্তম। গো ধরে বসে থেকে নিজের মতো সব করতে চাইলে তা সংগঠনের জন্য সুখকর হয় না।

তবে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্থা শারমিন বিষয়টিকে বিভাজনের কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন, ‘রাজনীতিতে এমন ধোঁয়া ওড়েই। এর মানে এই নয় যে, আমাদের মাঝে বিভাজন এসেছে। বরং, সংগঠনের নেতৃত্বের গভীরতা কতো বেশি, তাও কিন্তু এখানে প্রতিফলিত হচ্ছে’।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়ে নেতারা বলছেন, সময়ের পরিক্রমায় এটি প্রতিষ্ঠিত যে, একাধিক ছাত্রসংগঠনের শীর্ষনেতাদের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে কোটা সংস্কার আন্দোলন, যা পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই নেতারা তাদের আগের রাজনৈতিক সত্ত্বা ফেলে রেখেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় সবাই মিলেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে গড়ে তোলেন নতুন প্লাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ছিলেন না, কিন্তু জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রথম কমিটি থেকেই এর সাথে আছেন এমন একজন বলেন, সবচেয়ে বাজে বিষয় হচ্ছে, ট্যাগিংয়ের পুনঃপ্রচলন এবং এর মাধ্যমে ছাত্রনেতৃত্বে বিভাজন নিয়ে আসা। যে পরিচয় বিস্মৃত হয়ে একটি প্লাটফর্মে সবাই চলে এসেছিলেন, ট্যাগিংয়ে সেটি বিনষ্ট করার প্রয়াস হিসেবেই দেখছেন তিনি।

অন্য এক নেতা বলেন, কিছু সদস্য চান, শীর্ষ চার পদের দুটিই তাদের আগের সংগঠন, যার কার্যক্রম এখন স্থগিত (ছাত্রশক্তি), সেখান থেকেই হোক। কিন্তু তাদের চিন্তা করা উচিৎ, সাধারণ মানুষের মাঝে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে এবং তার গ্রহণযোগ্যতা কতোটুকু থাকবে। শুরুতেই সংগঠনকে বিতর্কিত করা ভালো কিছু হবে না।

তবে সব কিছুর সমাধান করেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আনতে আশাবাদী দুই প্রেসার গ্রুপ জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দল গঠন নিয়ে দেশজুড়ে জনমত জরিপ চলছে। জনমতের আলোকেই মাঠে নামবে নতুন রাজনৈতিক দলটি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ