Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাজেট ২০২৪-২৫

শিক্ষা ব্যয়ে সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হবে

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

শিক্ষাকে মানবসভ্যতার বিকাশ ও মানবসম্পদ উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই উন্নত দেশগুলোতে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশগুলোর সরকার এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের দেশের সরকারও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা খাতে সরকারি বাজেটে কম বরাদ্দসহ নানামুখী সমস্যা ও সংকটের কারণে এখনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। কিন্তু আসন্ন অর্থবছরের জন্য শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ১২ শতাংশও পার হয়নি। যদিও টাকার অঙ্কে গতবারের বাজেটের চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির তুলনায় এই ৬ হাজার কোটি টাকা খবুই অপ্রতুল।

ইউনেসকোর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হলেও রাষ্ট্রগুলোর শিক্ষায় বিনিয়োগ অপ্রতুল। এর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার বহন করে। একমাত্র ভুটান ছাড়া এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো কখনোই শিক্ষাক্ষেত্রে মোট সরকারি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ বা মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের কাছাকাছিও ব্যয় করেনি। সেখানে বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের কম ব্যয় করেছে। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

দেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়লেও মানের প্রশ্নে অভিযোগের অন্ত নেই। মাধ্যমিক পর্যন্ত সরকার বিনা মূল্যে বই দিলেও শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়ায় বাড়ছে খরচের বোঝা। স্কুলের পড়াশোনার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগের কারণে প্রাইভেট, টিউশন ও কোচিংয়ে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষা খাত নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এই দশা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তা ছাড়া দেশের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ অত্যধিক বেশি। তাই বহু পরিবারকে ঋণ করে কিংবা সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় সংকুলান করতে হয়। পরিবারভিত্তিক খরচের বিবেচনায় এই হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অধিকার সমানভাবে দেশের সব নাগরিক লাভ করবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? সাধারণত শিক্ষার সমান সুযোগ সবাই পাচ্ছে না। আবার দেশের বিশেষায়িত ও উচ্চশিক্ষায় বৈষম্য আরও প্রকট। মোটকথা, শিক্ষার আলো থেকে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী বঞ্চিত থাকছে। কারণ শিক্ষার অতিরিক্ত ব্যয়। ফলে যেসব শিক্ষার্থীর পরিবারের বেশি টাকা আছে, সেসব শিক্ষার্থী টাকা দিয়ে ভালো শিক্ষা ক্রয় করতে পারছে। অথচ নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রদান রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের মধ্যে পড়ে।

বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা চলে দুটি মন্ত্রণালয়ের অধীন। একটি হলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আরেকটি হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে ক্ষেত্রে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব দুটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভাজিত হওয়ার কারণে শিক্ষার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই শিক্ষার একক মন্ত্রণালয় ও নেতৃত্ব দরকার। সেই সঙ্গে স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের কোনো বিকল্প নেই।

কয়েক দশক ধরে দেশের শিক্ষা নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশিক্ষণও হয়েছে, কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে- শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে।

শিক্ষা হবে কর্মমুখী ও উৎপাদনশীল। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় শিক্ষা খাতে গবেষণার ওপর। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য আছে। আছে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের অভাব। আছে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ। তাই মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সত্যিকারের মানবসম্পদে রূপান্তর করা জন্য প্রয়োজন কাঙ্ক্ষিত বাজেট বরাদ্দ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে শিক্ষাঋণ ও শিক্ষা বিমার প্রবর্তন করা যেতে পারে। সর্বোপরি দেশের সব শিক্ষামাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ