জনস্বার্থে সরকারের স্বাস্থ্যখরচ কমাতে হবে
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য একটি। স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে কোনো দেশেরই উন্নতি হয় না। জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সরকারের উচিত স্থাস্থ্যব্যয় কমানো; কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশে খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নিতে আর্থিক সংকটে পড়ছেন। স্বাস্থ্যব্যয়ের কারণে দেশের ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে নেমে এসেছে, যা মোট দারিদ্র্যের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ‘বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য অভিঘাতের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যারা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এ ভার বহন আরও কঠিন। ক্যান্সার আক্রান্ত পরিবারকে তা একেবারে শেষ করে দেয়। রোগী তো কাজ থেকে দূরে থাকেনই, সঙ্গে তার পরিবারের অনেক সদস্যকেও তার সেবায় ব্যস্ত থাকতে হয়, চিকিৎসার পেছনে সময় দিতে হয়, ফলে তারাও নিয়মিত কাজে যোগদান করতে পারেন না, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
আরও ভয়ানক ব্যাপার, প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবা মেটাতে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ করতে হয় বাংলাদেশে। দেশে এ সেবার ৭৩ শতাংশ ব্যয় মানুষ নিজ পকেট থেকে মেটায়। জনগণের জন্য তেমন কেনো সরকারি সহায়তা ও স্বাস্থ্যবীমা নেই বললেই চলে এ দেশে।
বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য মান (Universal health coverage) অর্জন করা। এর অর্থ, দেশের সব নাগরিকের মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থিক সুরক্ষা থাকবে। আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাস্থ্যসেবার অধিকার সংরক্ষিত আছে; কিন্তু গত এক দশকে এই সেক্টরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও, সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা থেকে দেশ এখনো অনেক দূরে।
এমনিতেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কম, এই অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ পাওয়া গেছে, তার ওপর স্বাস্থ্যসেবা বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দুর্নীতি, ভুলভাবে ব্যয় হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। তাই গরিব মানুষ সবদিক দিয়েই যথার্থ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার স্বাস্থ্যব্যয় কমাবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে