Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট

মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরতে পারে সরকার

Md. Zahidul  Islam

মো. জাহিদুল ইসলাম

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

লতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময় মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার উপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এই সুবিধা আর বহাল থাকবে না বলে ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানিকে (ডিএমটিসিএল) সাফ জানিয়ে দিয়েছে এনবিআর।

এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে মেট্রোরেলের টিকিটের দাম বাড়বে। যার মাশুল গুণবেন যাত্রীরা। অবশ্য জনস্বার্থ বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ভিউজ বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মেট্রোরেলের উপর ভ্যাট ১৫ শতাংশের জায়গায় আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সেই ভ্যাট হার কমে ৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানান তিনি। আগের মতো অব্যাহতি পাওয়ার কোন সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবুজ সংকেত পেলে সম্ভব।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ যাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও যাত্রীভাড়া থেকে দৈনিক প্রাপ্ত আয়ের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী ৫০ টাকা ব্যয় করলে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে প্রতিদিন ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে পারবে এনবিআর। সে হিসাবে বছরে ৭১ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব যুক্ত হবে রাজস্ব খাতে।

বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিকিটের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত থাকলে বছর শেষে ৭১ কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। সে হিসাবে, ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করলে ২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।

ডিএমটিসিএল-এর ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ১০০ টাকা। এছাড়া যেকোন দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তবে এই ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ টাকায়। এছাড়া শুরু থেকে শেষ স্টেশনে যাতায়াত করলে ১০০ টাকার পরিবর্তে খরচ করতে হবে ১১৫ টাকা।

অন্যদিকে ভ্যাট ৫ শতাংশ আরোপিত হলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ টাকা। ১০০ টাকার ভাড়ার বিপরীতে গুণতে হবে ১০৫ টাকা। আর ভ্যাট অব্যাহতি চালু রাখলে ভাড়া আগের মতোই থাকবে।

বাড়তি এই অর্থ যাত্রীদের চাপ তৈরি করবে এবং মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার উপর ভ্যাট আরোপকে আত্মঘাতী বলে মনে করেন বেসরকারি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, মেট্রোরেল থেকে যে আয় হয় সেটাও সরকারের রাজস্ব। এখন আরও রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভ্যাট আরোপ করলে যাত্রীর ভাড়া বাড়বে। এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এমনিতেই আমাদের মেট্রোরেলের ভাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু সর্বোচ্চই নয়, প্রায় কয়েকগুণ বাড়তি যেটা সাধারণ মানুষদের জন্য অনেক বেশি চাপ তৈরি করছে।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র যানজটকে পুঁজি করে মেট্রোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণপরিবহনের সেবার মান উন্নত হলে ও যানজটমুক্ত থাকলে এই ভাড়ায় মেট্রোরেলে যাত্রী পাওয়া কঠিন ছিল। সরকারকে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।

শুধু মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপ করাকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

ভিউজ বাংলাদেশকে তিনি বলেন, নীতিগতভাবে যেসব সেবার উপর ভ্যাট আরোপযোগ্য তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভ্যাট আদায় করা উচিত। তবে এটা যেন এমন না হয়-মেট্রোরেলের উপর ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আমদানির উপর ভ্যাট অব্যাহতি চালু রাখলাম। নীতিমালা সবার জন্য সমান হলে কষ্টসাধ্য হলেও যাত্রীরা আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এর আগে মেট্রোরেলের টিকিটের উপর ভ্যাট আদায় না করার ব্যাখ্যাসহ এনবিআর-কে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে চলে। শুধুমাত্র ভাড়ার টাকায় লাভজনকভাবে মেট্রোরেল পরিচালনা করা যায় না। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস না থাকায় মেট্রোরেলের যাত্রী সেবার উপর কোনো ধরনের মূসক প্রযোজ্য নয়।
অন্যদিকে এনবিআরের আইন অনুযায়ী তাপানুকূল (এসি) ও নন-এসি রেলওয়ে সার্ভিসের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেলের অন্তত বিশজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত যাত্রীদের উপর এক ধরনের বোঝা। জনবান্ধব নয় এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার পরামর্শ তাদের। সেইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর অভিযানে নিম্ন আয়ের মানুষ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সে বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখার আহ্বান জানান তারা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ