মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিরাপত্তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে
বাক স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে। তাই সুস্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন; কিন্তু যুগে যুগে দেখা গেছে, গণমাধ্যম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে পড়েছে। যে দেশে গণতন্ত্র যত কম, সে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও ততটুকু কম।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা চলেছে বারবার, তৈরি করা হয়েছে ভয়ের সংস্কৃতি। একাধিক সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। প্রকাশিত সংবাদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে অসংখ্য সাংবাদিককে। কুড়িগ্রামে আরিফুল ইসলাম রিগ্যান এবং ঢাকায় সচিবালয়ে রোজিনা ইসলামকে চরম হেনস্তার ঘটনা সাংবাদিক নির্যাতনের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে।
শুধু নিজের মত প্রকাশের অপরাধে একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে দেশের ৬৪ জেলায় মামলা করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনায় কোনো নির্যাতকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তির মর্যাদা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বপালনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, এটা সবাই প্রত্যাশা করছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বন্ধ হওয়া একাধিক গণমাধ্যম নতুন করে চালু হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এগুলো সবই ইতিবাচক আগামীর ইঙ্গিত দেয়; কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কার কারণও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১৫ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকাসহ কয়েকটি জায়গায় একদল তরুণ সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছে, ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দিয়েছে, শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঠিক এভাবেই বাধা দেয়া হতো। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে এ ধরনের বাধা দেয়ার ঘটনা বড় আশঙ্কার জন্ম দেয়। যদিও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সার্জিস আলম এবং সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনাকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন অভিহিত করেছেন।
তাদের এই বক্তব্য সময়োপযোগী হলেও সাধারণ মানুষের আশঙ্কা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করায় মানুষের যে দম বন্ধ অনুভূতি হয়, তা থেকেই জন্ম হয় জনরোষের। এ কারণে জনসাধারণকে অবশ্যই কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। আবার এ কথাও সত্য, গণমাধ্যম হাতে থাকলেই যা খুশি বলা যাবে, তাও না। গণমাধ্যমেরও তথ্য ও মতামত প্রকাশে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
তবে সবার আগে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা আশঙ্কামুক্ত হবেন না। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে