রেস্তোরাঁ-ইন্টারনেট ও পানীয়সহ শতাধিক পণ্যে বাড়ল শুল্ক-ভ্যাট
মোবাইলফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট, হোটেল-রেস্তোরাঁ সেবা, সিগারেট, কোমলপানীয়সহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়াল সরকার।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সই করা এ-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশগুলো হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে যায়।
যেসব সেবায় খরচ বাড়ল
মোবাইলফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সেবা বা আইএসপির উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া রেস্তোরাঁ ও ইভেন্টিং সেবায় ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মিষ্টির দোকান ও নন-এসি হোটেলেও একই হারে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি
সুপারি বাদাম, তাজা বা শুকনা সুপারি, পাইন বাদাম, ফলের রস, তামাক, সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্টস ও ভার্নিশসহ বেশ কিছু আমদানিকৃত পণ্যে ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুপারি ও সুপারি জাতীয় পণ্যে শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ, ফলের রসে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
স্থানীয় পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধি
দেশীয় পণ্যের মধ্যে কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, ফেসিয়াল টিস্যু, সানগ্লাস, ফ্যাশন হাউজ, মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্রান্ড সম্বলিত তৈরি পোশাকের শো-রুম বা বিপনী বিতানের উপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, ইলেক্ট্রিক পোল, মোটর গাড়ীর গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় যোগানকারী, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাব ইত্যাদিতে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সিগারেট ও মদে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি
চারটি স্তরে সিগারেটের দাম ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিম্ন স্তরে ১০ শলাকার দাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা এবং শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। উচ্চ স্তরে ১০ শলাকার দাম ১৬০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা এবং শুল্ক ৬৫.৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া হোটেল ও বারে মদ সরবরাহের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি
অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে দ্বিগুণ করে ১ হাজার টাকা এবং এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী পর্যায়ের কর পরিবর্তন
ব্যবসায়ীদের বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি হলেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ওষুধ খাতে ভ্যাট ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মোবাইলফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্তোরাঁর খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খরচ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে