Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

চলতি অর্থবছরে কমেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যরপ্তানি

চামড়াজাত পণ্যরপ্তানি বাড়াতে উৎসে কর কমাবে সরকার

Md. Zahidul  Islam

মো. জাহিদুল ইসলাম

সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাতের মধ্যে তৈরি পোশাকের পরই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান। তবে খাতটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমার পাশাপাশি দেশের বিদ্যুতের দাম, ব্যাংকের সুদের হার, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে জাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বাড়লেও সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি।

তবে আশার কথা হল, রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই খাতটিকে এগিয়ে নিতে রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থমন্ত্রীর সবুজসংকেত পেলেই আদেশ জারি করতে পারে এনবিআর। এর মেয়াদকাল হতে পারে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৬ লাখ ও পরোক্ষভাবে আরও ৩ লাখ মানুষ জড়িত। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মধ্যে এই খাতের অবদান ৪ শতাংশ, যা দেশের মোট জিডিপি’র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অর্যা রৎ সম্ভাবনাময় এই খাতটি চাঙ্গা করতে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে উৎসে কর কমিয়ে আনা হলে রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। পাশাপাশি এই খাতকে ঘিরে দেশের কর্মসংস্থানও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বব্যাপী চামড়া খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০২২ সালে বিশ্বব্যপী চামড়াজাত পণ্যে বাজারের আকার ছিলো ৪২০ বিলিয়ন ডলারের। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের নতুন একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে চামড়াজাত পণ্যের বিশ্ব বাজারের আকার ৬২৪ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কানাডাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা প্রেসিডেন্সি রিচার্সের গবেষণা অনুযায়ী ২০৩২ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার হবে ৭৩৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে বাংলাদেশ এ খাতে রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছে। তথ্য বলছে, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এনবিআর কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে এ খাতকে প্রমোট করা প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের রপ্তানি প্রসারে, উদ্যোক্তা তৈরি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ বিবেচনায় কর সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।

এছাড়া, ভবিষ্যতে চায়না প্লাস ওয়ান নীতির ফলে বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগেরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী রপ্তানিকারকরা সীমিত স্কেলে রপ্তানি চালিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্যভিত্তিক 'লেবার ওয়ার্কিং গ্রুপ' (এলডব্লিউজি) সনদের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতাদের অর্ডার পেতে কষ্ট হচ্ছে, কেননা এ খাতের পরিপালন ব্যয় অত্যাধিক।

তবে এতসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে উৎপাদিত গার্মেন্টস পণ্যের তুলনায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্র অনেক বেশি। কেননা বাংলাদেশে এ শিল্পের সকল কাঁচামালের প্রতুলতা রয়েছে যা গার্মেন্টস্ শিল্পের ক্ষেত্রে নেই। ফলে বৈশ্বিক বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ একাই দখল করতে সক্ষম বলে মনে করেন তারা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ