সংস্কৃতিচর্চায় বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশের সংস্কৃতিচর্চায় নানা বাধা আসছে। অনেক বাউল গানের আসর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন কি ঢাকা, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চনাটকও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় যেসব বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেগুলোকেও নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশ এক প্রকার স্থবির দশায় পতিত হয়েছে। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ বলছেন, সংস্কৃতিচর্চায় বাধা কল্যাণ বয়ে আনবে না। শিল্পীদের কর্মকাণ্ড ও সাংস্কৃতিক আয়োজন বাধার মুখে পড়লে দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা বিবৃতিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এমনিতেই আন্দোলনের পর আমাদের শিল্পীদের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক শিল্পীদের কর্মকাণ্ড ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আয়োজনে বাধার কারণে সেটি আরও বাড়বে। এসব করতে বাধা দেওয়ার মানে হলো, স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত করা। একইরকম মন্তব্য জানানো হয়েছে ডিরেক্টরস গিল্ড থেকে, ‘থিয়েটার চর্চায় মুক্ত পরিবেশ নেই’।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, আমরা মুক্ত পরিবেশে থিয়েটার করতে অভ্যস্ত। সেই পরিবেশ এখন আর নেই। কোনো অবস্থাতেই ভাবতে পারছি না- সংস্কৃতিবান্ধব কোনো সরকার দেশে আছে। থাকলে তো উৎসব বন্ধ হতো না। আমরা মহানগর নাট্যোৎসব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। সরকারের সাহায্য চেয়েও পেলাম না। এ রকম ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। যেখানে কালচারাল অ্যাক্টিভিটিজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখানে স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা খুব অসহায় বোধ করছি। বিচার চাওয়ার জায়গাটাও আসলে আমাদের নেই।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, হুমকির অভিযোগে শনিবার স্থগিত করা হয়েছে ১৪ দিনের ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। একই দিন অনুমতি থাকলেও চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান মাঝপথে বাতিল করে রেলওয়ে। এর আগে টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্থগিত হয় লালন স্মরণোৎসব। গত শুক্রবার ভূঞাপুরে দোকান থেকে ছুড়ে ফেলা হয় ফুল। বন্ধ করা হয় ঘুড়ি উৎসব। গত ২৫ জানুয়ারি এলেঙ্গায় বাতিল হয় চিত্রনায়িকা পরীমণির কসমেটিক পণ্যের দোকান উদ্বোধন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি। এর আগে ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮০টি মাজার-দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এমতাবস্থায় শিল্পী-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিজনদের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। জানা গেছে বইমেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের আতঙ্কজনক পরিবেশ। এর মধ্যে ‘তৌহিদি জনতার’ বাধার মুখে একটি প্রকাশনী বন্ধ হয়েছে। গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে একটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ‘মব’-এর হাতে সবাই বন্দি হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। প্রশাসন নমনীয় হয়ে যাচ্ছে মবের ভয়ে; কিন্তু এভাবে তো একটি দেশ চলতে পারে না।
একটি দেশে নানা মত-পথের মানুষ থাকবে। বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশ থাকবে। এসব সাংস্কৃতিক কাজে বাধা সৃষ্টি করলে তা কোনোভাবেই দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে না। আন্তর্জাতিক বিশ্বেও আমাদের অবস্থানকে আরও হেয় করবে। তাই আমরা চাই সংস্কৃতিচর্চায় বাধা দূর করতে সরকার যথাযোগ্য ভূমিকা রাখুক। সংস্কৃতিচর্চায় বাধার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ প্রতি পদে পদেই পিছিয়ে যাবে। এটা কোনোভাবেই হতে দেয়া যাবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে