টিআরএনবি'র সেমিনারে বিটিআরসি চেয়ারম্যান
'ইন্টারনেটের দাম কমাতে কাজ করছে সরকার'
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য কাজ করছে সরকার। সোমবার টেলিকম টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের মূল্য কমাতে মোবাইল ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ব্রডব্যান্ড সেবায় জোর দিতে হবে এবং বিটিআরসি এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করছে।’
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ইন্টারনেটের খরচ কমানো প্রায় অসম্ভব। এজন্য আমরা ব্রডব্যান্ড সেবার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি এবং মন্ত্রণালয়ে একটি ব্রডব্যান্ড নীতি পাঠিয়েছি।’
টেকসই ও সাশ্রয়ী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে দেশের এনটিটিএন এবং মোবাইল অপারেটরদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহক, অপারেটর ও সরকার সবাই চায় রোবস্ট ও ইনক্লুসিভ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি। এক্ষেত্রে সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যবসা সুরক্ষায় নয়, সেবার চাহিদায় গুরুত্ব দিয়ে রেফারির দায়িত্ব পালন করবে বিটিআরসি। কোন পক্ষকেই দানব হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিউজ বাংলাদেশের সম্পাদক ও টিআরএনবির সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী।
টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি বেসরকারি মিলে সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। আর এ নেটওয়ার্কের ফলে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল সেবা ছড়িয়ে পড়েছে।
এনটিটিএন অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনেই ২০০৮ সালে এনটিটিএন’র জন্ম। গত ১৬ বছর ধরে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে কমন নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছে এনটিটিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কমন নেটওয়ার্কের ফলে আইএসপিরা তৃণমূলে ব্রডব্যান্ড সেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কমন নেটওয়ার্কের কারণে ট্রান্সমিশন খরচ ১০ হাজার টাকা থেকে ১০০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
রবি আজিয়েটার কর্পোরেট অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের গুনগত মানসম্পন্ন নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ফাইবার কানেকটিভিটির বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে এনটিটিএন অপারেটরদের কাছ থেকে ডার্ক ফাইবার পাওয়া জরুরি। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে।’
তিনি বলেন, ‘নেটওয়ার্ক অবকাঠামো অপারেটর হিসেবে এনটিটিএন বিলুপ্ত হোক এটা মোবাইল অপারেটররা চায় না। তবে যথাযথ ট্রান্সমিশন সেবার নিশ্চয়তা চায় অপারেটররা।’
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ পেলে সেবার গুণগত মান বাড়বে। যেমন পর্যাপ্ত বিটিএস স্থাপনের সুযোগ না পেলে মান সম্পন্ন ফোরজি এবং আগামীতে ফাইভ-জি সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি বেতার তরঙ্গের দাম কামানোরও অনুরোধ জানান।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, ‘অপতথ্যের অজুহাতে আমরা কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারি না। এজন্য আইন করা দরকার। টেলিকমের অবকাঠামো, কন্টেন্ট ও প্রতিযোগিতা, এ তিনটি বিষয় নিয়ে পলিসি পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো উচিত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, ‘মোবাইলে প্রচুর কল ড্রপ হয়। অনেক জায়গায় আমরা সংযোগও পাই না। তাই আমরা কোন সেবাটি মোবাইল এবং কোন সেবাটি আইএসপি থেকে পাবো তা স্পষ্ট করা দরকার।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন টেলিটকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মাবুদ চৌধুরী, এমটব মহাসচিব মো. জুলফিকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক ও সামিট কমিউনিকেশনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ফররুখ ইমতিয়াজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে