Views Bangladesh Logo

নিরাপত্তাহীনতায় কর্মজীবী নারীরা

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘরের বাইরে পা রেখেছেন নারীরা। পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন সমান তালে। কায়িক শ্রম কিংবা মেধাভিত্তিক, যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা নিজেদের প্রমাণ করছেন সফলভাবে। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনো নানা সামাজিক বাধা-বৈষম্য আর নিরাপত্তাহীনতার শিকার নারীরা!

নিরাপত্তাহীনতার এ শঙ্কার মাঝেই শুরু হয়েছে পবিত্র মাস মাহে রমজান। স্বাভাবিকভাবেই ইফতারের পর সুনসান হয়ে পড়ছে রাজধানী। ফলে ঘরে ফিরতে, এমনকি স্বাভাবিক ঘোরাফেরা করতেও অজানা আতঙ্কে ভুগছেন কর্মজীবী নারীরা।

সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় যে মেয়েরা কাজ বা নানা উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে বের হন, তারাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বেশি।

পেশায় সাংবাদিক সারিকার অফিস কারওয়ানবাজার। মাঝে মাঝেই রাতে ফিরতে হয় বাসায়। মিরপুরে বাসা হওয়ায় কখনো মেট্রোরেল কিংবা কখনো বাসে আবার রিকশায় যাতায়াত করেন। তিনি জানান, প্রায় রাতেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রিকশাচালকদের আচরণেও তিনি শঙ্কিত হন মাঝে মাঝে। প্রধান সড়কে যেতে বললেও নির্লিপ্তভাবে চালকরা চলে যান গলির রাস্তায়। ছিনতাইয়ের ভয় তো রয়েছেই প্রতিনিয়ত।

উত্তরার ব্যস্ত সড়ক জসিমউদদিনে গত ৩ মার্চ (দ্বিতীয় রোজায়) সন্ধ্যা প্রায় সাতটার দিকে অল্প কয়েকজন মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী শেখ সানজিদা। মিরপুরগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

এই নারী বলছিলেন, ‘রাতে সব সময়ই ভয়ে থাকি। যেভাবে ধর্ষণ, ছিনতাই, নারীদের উত্ত্যক্ত করা চলছে, একা চলতেও ভয় লাগে। পাঠাও-উবারে ভরসা করতে পারি না। বাসে যাতায়াত করতে গেলেও শঙ্কায় থাকতে হয়। রোজায় সাধারণত ইফতারের পর রাস্তা অনেকটা সুনসান থাকে। এতে আরও ভয় লাগে। বাকি রোজায় ইফতারের আগেই বাসায় ফেরার চেষ্টা করব।’

রাজধানীর ফার্মগেট থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাইয়্যেদা ইসরাত। ছাত্র পড়িয়ে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। এরপর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

তিনি বলছিলেন, দেশে ধর্ষণ-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় নারীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা অনেক। নারীদের কোনো পেশায় নিয়োজিত হওয়াটাও যেন এখন অপরাধ!

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) জরিপ বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসেই কমপক্ষে ১০৭ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও ১৩ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। অন্যদিকে ১০৪টি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯ জন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সমাজের ভঙ্গুর অবস্থার নিদর্শন এখন দৃশ্যমান। দুর্বলেরা সবলদের হাতে আঘাত পাচ্ছেন। যতদিন মব বন্ধ না হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন নারীদের নিরাপত্তা পর্যুদস্তই হবে। সমাজকাঠামোর ভঙ্গুর অবস্থা থেকেও আমাদের দ্রুত উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। না হলে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ‘ওড়না কাণ্ড’ নিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হলো। উপাচার্য ও প্রক্টরও এর নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতার প্রমাণ দিলেন।

ড. ফওজিয়া বলেন, সমসাময়িক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুধু নারীকে নয়, পুরো সংবিধানকেই আঘাত করছে। সমাজব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ