Views Bangladesh Logo

‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ যেন আর ফিরে না আসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যে ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ চালু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেই অমানবিক ‘গেস্টরুম কালচার’ দূর হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। খবরটি নিঃসন্দেহে আনন্দের ও আশা জাগানিয়ার। কারণ, শিক্ষার্থীদের ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত ছাত্রলীগের কর্মীরা। শুধু তাই নয়, হলের খাবারের দোকান ও ক্যান্টিনে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, এসবও তারাই নিয়ন্ত্রণ করত। ছাত্র-জনতার ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়া লাগছে দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসংকট অনেকটাই কমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। সব কয়টি ক্যাম্পাসেই প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসন অকার্যকর ছিল। ছাত্রদের ১৩টি হল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রলীগ। কে কোন কক্ষে থাকবে, তা ঠিক করতেন ছাত্রলীগের নেতারা। শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যেতে হতো। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। গাদাগাদি করে হলের গণরুমে থেকে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের শিকারও হতে হতো তাদের।

ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ কথায় তারা উঠতে-বসতে বাধ্য থাকতেন। এ ছাড়া হলগুলোর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির কারণে শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের খাবার খেতে হতো। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হয়েছে। নতুন প্রশাসন আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও অনেকটা বদলে গেছে। এখন হলগুলোতে রাজনৈতিক গণরুম নেই, ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনও নেই। প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে হলে আসন বণ্টন করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে হলে তারা একধরনের আতঙ্কে থাকতেন। সেই ভয়ের পরিবেশ এখন নেই। আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয় ভয়মুক্ত হোক। কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবদ্ধ না হয়। কোনো ক্ষমতাসীন সরকারই যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতার থাবা বিস্তার করতে না পারে। বাংলাদেশে দেখা যায়, যে সরকারই ক্ষমতা আসে, সে সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। মারামারি, সংঘর্ষ, হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম হয়নি বিগত বছরগুলোতে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা সব সময়ই চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালগুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকুক। আমাদেরও চাওয়াও তাই। দেশের সব শুভবুদ্ধির মানুষই এই দাবির সঙ্গে একমত হবেন। তাহলে বারবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক ক্ষমতাতন্ত্রের জাঁতাকলের নিচে কেন ফেলা হচ্ছে? এতে করে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর লেখাপড়ার মান আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছাত্রলীগের নির্যাতনের ভয়ে অনেক বাবা-মা তাদের মেধাবী সন্তানদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতেও ভয় পেতেন। আমরা চাই চিরতরে এই অপসংস্কৃতি ও দুষ্টচক্রের অবসান ঘটুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ