যুদ্ধ বন্ধে সামগ্রিক চুক্তির দাবি হামাসের
গাজায় ইসরায়েলের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। তারা সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ সমাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক চুক্তি এবং ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বার্তায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া বলেন, “এখন থেকে আমরা আর কোনো অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে সম্মত হব না। হামাস এখনই সামগ্রিক আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আলোচনায় থাকবে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, গাজার পুনর্গঠন এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সব বন্দি বিনিময়।”
তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রেখে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এসব আংশিক চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি সরকার তাদের আসল উদ্দেশ্য আড়ালে রাখে; কিন্তু স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের জিম্মিদেরও বলি দিতে পিছপা হবে না তারা। আমরা তাদের এই খেলার অংশ হব না।”
ইসরায়েল ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যাতে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির সুযোগ তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। তবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলেছে, কেবল যুদ্ধ সমাপ্তির ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির অংশ হিসেবেই বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে।
তারা দাবি করেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, আগ্রাসন বন্ধ এবং বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের দাবি ইসরায়েলের পক্ষে মেনে নেয়ার সম্ভাবনা কম। এর ফলে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে।
এদিকে হামাসের দাবির সমালোচনা করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেছেন, “হামাসের কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা কেবল অনিঃশেষ নৃশংসতা জিইয়ে রাখতে আগ্রহী।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত এখনো একই আছে, সেটা হলো-‘জিম্মিদের ছেড়ে না দিলে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।’
অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে থাকা বাকি ৫৯ জন জিম্মির মুক্তি এবং গাজার নিরস্ত্রীকরণ ছাড়া তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না। তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলেছে, কেবল যুদ্ধ সমাপ্তির সামগ্রিক নিশ্চয়তা পেলেই তারা জিম্মি মুক্তি ও অস্ত্রত্যাগের শর্ত মেনে নেবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পর গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে হামাস ৩৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল। তবে দুই মাসের মধ্যে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর করতে চেষ্টা করলেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে গত সোমবার কায়রোতে আয়োজিত বৈঠকও ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানান ফিলিস্তিনি ও মিসরীয় কর্মকর্তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে