Views Bangladesh Logo

নান্দনিকতায় অনন্য হায়াও মিয়াজাকির সেরা পাঁচ অ্যানিমেশন

অ্যানিমেশন শব্দটি শুনলেই অনেকে মনে করে বাচ্চাদের জন্য নির্মিত কোনো কার্টুন। কিন্তু আসলে তা নয়। প্রায় প্রত্যেক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে রয়েছে এমন বার্তা যা আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। সেই অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রকে নিয়ে গেছে জাপানিজরা এক অনন্য উচ্চতায়। আর জাপানিজ অ্যানিমেশন শুনলে প্রথমেই যার কথা মাথায় আসে তিনি হায়াও মিয়াজাকি। তার নির্মিত অ্যানিমেশনগুলো ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষ উপভোগ করে। তার নির্মিত অ্যানিমেশনগুলো নির্মাণশৈলী, কথোপকথন এবং নান্দনিকতার দিক দিয়ে অনন্য। তাই যে কোনো দর্শক একবার তার নির্মিত কোনো অ্যানিমেশন দেখতে নিলে স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে পারবে না কেউই।

চলুন দেখে নেয়া যাক আইএমডিবি রেটিংয়ে উপরের দিকে থাকা হায়াও মিয়াজাকি নির্মিত সেরা ৫ অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র-

স্পিরিটেড অ্যাওয়ে
হায়াও মিয়াজাকির শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে ধরা হয় ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’-কে। এটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। মুক্তির পর পরই প্রশংসায় ভাসতে থাকেন হায়াও মিয়াজাকি। এমনকি ২০০৩ সালে ৭৫তম একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অ্যানিমেটেড ফিচারের জন্য এই অ্যানিমেশন একাডেমি পুরস্কার পায়। এখন প্রশ্ন হতে পারে কী এমন আছে এই অ্যানিমেশন ছবিতে যার জন্য এটি একাডেমি পুরস্কার পেল। আপাতদৃষ্টিতে অ্যানিমেশনটি দেখলে মনে হবে এটি বাচ্চাদের একটি কার্টুন। কিন্তু হায়াও মিয়াজাকি অ্যানিমেশনটিতে এমন কিছু রূপক এবং জাপানিজ লৌকিকতা ব্যবহার করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। স্টোরিটেলিং, ভিডিও ভিজ্যুয়ালাইজিংও ছিল অনবদ্য।

কাহিনি শুরু হয় চিহিরো নামক এক মেয়েকে নিয়ে, যে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ভ্রমণে বেরিয়েছিল। তারপর তারা রাস্তায় শর্টকাট নেওয়ার সময় এমন এক জায়গায় যায় যা দেখতে কিছুটা পার্কের মতো ছিল। কৌতূহলবশত তারা সেখানে প্রবেশ করলে কতগুলো হোটেলের মতো খাবার জায়গা পায় যেগুলো খাবারে পরিপূর্ণ ছিল। চিহিরোর বাবা-মা আগুপিছু কিছু না ভেবেই লোভে পড়ে খেতে শুরু করে। যার ধরুন কিছুক্ষণ পর তার বাবা-মা শূকরে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এতে করে চিহিরো সে জায়গাতেই ফেঁসে যায়। এরপর দেখা যায় চিহিরো হাকু নামে এক বালকের সাহায্যে সেখানকার একটি বাথহাউসে চাকরি নেয় যেখানে ইউবাবা নামে এক ডাইনি তার মালিক ছিল। চাকরি পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী চিহিরোর নাম পরিবর্তন করা হয়। এরপর নানা কল্পকাহিনির মধ্য দিয়ে স্পিরিটেড অ্যাওয়ের কাহিনি এগিয়ে যায়।

অনেক বিশ্লেষকের মতে এই বাথহাউসগুলো জাপানের পতিতালয়কে নির্দেশ করে। প্রাচীনকালে জাপানের পতিতালয়ে শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হতো যা এই অ্যানিমেশনেও দেখা যায়। তবে এ বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত হায়াও মিয়াজাকিকে কিছু বলতে শোনা যায়নি।

প্রিন্সেস মনোনোকে
প্রিন্সেস মনোনোকে ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। স্পিরিটেড অ্যাওয়ে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল জাপানে আয় করা সর্বোচ্চ অ্যানিমেশন। আইএমডিবিতে এই অ্যানিমেশনের রেটিং ৮.৪। প্রিন্সেস মনোনোকে পুরোনো জাপানের প্রেক্ষাপটে মানুষ ও দেবতাদের মধ্যে এক মহাকাব্যিক যুদ্ধের কাহিনি। এই অ্যানিমেশনে প্রধান দুই চরিত্রই নারী। প্রিন্সেস মনোনোকে ভালোবাসে প্রকৃতিকে আর অন্যদিকে আরেক নারী চরিত্র ইবোশি চায় প্রকৃতির ক্ষতি। পরিবেশ রক্ষার ওপর ভিত্তি করে এই অ্যানিমেশনটি তৈরি হয়েছে।

মাই নেইবার তোতোরো
১৯৮৮ সালে অ্যানিমেশনটি মুক্তি পায়। তাতসুও কুসাকাবে তার দুই মেয়ে, সৎসুকি এবং মেইকে নিয়ে এক গ্রামে স্থানান্তরিত হন, যাতে তারা তাদের অসুস্থ মায়ের কাছাকাছি থাকতে পারে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গ্রাম্য পরিবেশের সঙ্গে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়ার সময়, একদিন মেই উঠানে এক অদ্ভুত খরগোশের মতো প্রাণী দেখতে পায়। প্রাণীটিকে অনুসরণ করতে করতে সে বনের গভীরে পৌঁছায় এবং পরিচিত হয় “তোতোরো” নামের এক বিশাল ও রহস্যময় বন আত্মার সঙ্গে। তোতোরোর সঙ্গে মেইয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা পরে সৎসুকিকেও এর অংশ করে। এরপর দুই বোনের জীবন জাদুকরী প্রাকৃতিক অভিযানে এবং বনের রহস্যময় প্রাণীদের সঙ্গে নানা রোমাঞ্চকর ঘটনায় ভরে ওঠে। আইএমডিবিতে এর রেটিং ৮.১

হাউলস মুভিং ক্যাসল
হাউলস মুভিং ক্যাসল ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। এটি ব্রিটিশ লেখক ডায়ানা উইন জোন্সের ফ্যান্টাসি উপন্যাস। একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প হাউলস মুভিং ক্যাসল যেখানে ১৮ বছর বয়সি তরুণী সোফি এক ডাইনির অভিশাপে হঠাৎ করেই বৃদ্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বাবার হ্যাটের দোকানে কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পথে তার দেখা হয় এক কাকতাড়ুয়ার সঙ্গে, যে তাকে নিয়ে যায় হাউলের রহস্যময় মুভিং ক্যাসলে।

নোংরা আর অদ্ভুত সেই চলমান দুর্গে সোফির পরিচয় হয় আগুনের দানব ক্যালসিফারের সঙ্গে। ক্যালসিফার সোফির সঙ্গে একটি চুক্তি করে- যদি সোফি তাকে সাহায্য করে, তবে সে তাকে অভিশাপ মুক্ত করতে সাহায্য করবে। সেখানে সোফির পরিচয় হয় জাদুকর হাউল এবং ছোট্ট মার্কেলের সঙ্গে।

গল্পের একপর্যায়ে সোফি হাউলের প্রেমে পড়ে। সে হাউলকে তার প্রাক্তন শিক্ষক ম্যাডাম সুলিমানের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে। এরপর সোফি জানতে পারে, হাউলের হৃদয় আসলে ক্যালসিফারের হাতে বন্দি। যদি ক্যালসিফারকে মুক্ত করা যায়, তবে হাউলের হৃদয় ফিরে আসবে, হাউল বাঁচবে এবং ক্যালসিফারও মুক্ত হবে। গল্পটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় জাদু, প্রেম এবং আত্মত্যাগের মোড় নিয়ে। শেষ পর্যন্ত হাউল এবং সোফি একত্রিত হয় এবং গল্পটি একটি সুন্দর সমাপ্তি পায়। আইএমডিবিতে এর রেটিং ৮.২।

ক্যাসল ইন দ্য স্কাই
ক্যাসল ইন দ্য স্কাই ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায়। আইএমডিবিতে রেটিং ৮। এটি স্টুডিও জিবলির প্রথম অ্যানিমেশন সিনেমা। শিটা এবং পাজু নামে দুইজনের শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযানের গল্প নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার এবং ফ্যান্টাসি জনরার এই অ্যানিমেশনটি নির্মিত হয়েছে। ক্যাসল ইন দ্য স্কাই এ মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক কেমন তা দেখা যায়। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি পরিবেশ এবং মানুষের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে তাও তুলে ধরা হয়েছে এতে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ