বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের স্বীকৃতি দিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হাইকোর্টের
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চার সচিবের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সোমবার এ রায় দেয় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব ও সমাজকল্যাণ সচিব থাকবেন। কমিটিকে আগামী ৪ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রিটটি চলমান তদারকিতে থাকবে।
এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সামরিক সরকার মিছিল-মিটিং বন্ধ করে দেয়। তা সত্ত্বেও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও সামরিক জান্তা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও স্বাধীনতার চেতনা লালনকারীরা এই প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
আইনজীবী বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুভক্ত কয়েক হাজার ছাত্র, তরুণ ও মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সপরিবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। যে কারণে ছয়জন ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা’ ২০২২ সালে রিটটি দায়ের করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৭ আগস্ট রুলজারি করেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ আদালত উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে রায় দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার নিজ বাড়ী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে একদল সেনা কর্মকর্তা। হত্যার পর পর দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, চাদপুরের ফরিদগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়সহ দেশের বেশ কিছু স্থানে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। সামরিক জনতার রক্তচক্ষু ও বুলেটভীতিকে উপেক্ষা করে যারা ওই সময় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাদের যথাযথ স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের জন্যই রিটটি দায়ের করা হয়। আজকের রায়ের ফলে ওই যোদ্ধাদের স্বীকৃতির দ্বার উন্মোচিত হলো বলে জানান এডভোকেট বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে