Views Bangladesh Logo

তাপপ্রবাহ ও খরায় বান্দরবানে এবার আমের ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বান্দরবানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, পোকার উপদ্রব ও সেচ সংকটে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এরইমধ্যে খরা ও অনাবৃষ্টিতে আমের মুকুল বাতাসে ঝরে যাওয়ায় গাছে আমের গুটিও ধরেছে কম। বর্তমানে ছোট-বড় আম যা আছে তাও ঝরে যাচ্ছে। এতে এবার জেলার ৭টি উপজেলায় আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় স্থানীয় চাষিদের দাবি, আম বাগানে কীটনাশক ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। ক্ষতি কমাতে আচার তৈরির জন্য কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছে বাগানিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদনের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত লাইমী পাড়া, গেজমনি পাড়া, স্যারণপাড়া, ফারুকপাড়া, বসন্ত পাড়া, ম্রোলং পাড়া, এ্যাম্পু পাড়া, ওয়াইজংশন, চিম্বৃক এবং রুমা-থানচি সড়কের বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামগুলো। এসব গ্রামের আম বাগানের গাছগুলোতে ভরপুর মুকল আসলেও আশানুরূপ আম ধরেনি। কারণ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, খরা ও অনাবৃষ্টিতে পানির অভাবে সেচ দিতে না পারায় আমের মুকুল ও গুটি ঝরে গেছে বলে দাবি আম চাষিদের।

ম্রোলং পাড়ার আম চাষি মেনলে ম্রো বলেন, প্রচণ্ড গরমে পানির সংকটে আম ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই ২০/২৫ টাকা কেজিতে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছে চাষিরা। ঝরে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০/১২ টাকায়।

তিনি আরও বলেন, আচার তৈরির জন্য পাহাড়ি আম চাষিদের কাছ থেকে একেক মণ ৮০০ টাকায় কাঁচা আম কিনে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি কমাতেই কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছে আম চাষিরা।


স্থানীয় চিম্বুক সড়কের বসন্ত পাড়ার আম চাষি রিএং ম্রো ও গেজমনি পাড়ার আম চাষি লাল সিয়াম বলেন, হপার পোকা ও আচা পোকা বাগানগুলোর আমের ক্ষতি করছে। আম ছিদ্রকারী পোকা উড়ে এসে হুঁল ফুটিয়ে যাচ্ছে। তাই পোকা দমনে কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে খরার কারণে গাছে থাকা অবস্থাতেও আমের বোটা শুকিয়ে কুচকে যাচ্ছে। যারা ঠিকঠাক সেচ ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন, তাদের বাগানের গাছগুলোতে আম এখনো বেশ রয়েছে। কিন্তু যারা সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন না, তাদের বাগানে আম দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ে আম্রপালি ও রাংগোয়াই জাতের আমের উৎপাদন ভালো হয়। এবারও আম বাগানগুলোতে গাছে আমের মুকুল এসেছিল ভরপুর। মুকুল দেখে চাষিদের সঙ্গে দামাদামি করে আমের বাগান কিনেছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে ঝরে গেছে আমের মুকুল। এতে অগ্রীম টাকা দিয়ে আম বাগান কিনে নেয়া ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে ১০ হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৩৭৮ মেট্টিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার আমের চাষ বেড়েছে ১০০ হেক্টর জমিতে।

গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) জেলায় আমের চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ছয় হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৭৭র মেট্টিক টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) আমের চাষ হয়েছিল ৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ২০৭ মেট্টিক টন।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী জানান, খরায় ও অনাবৃষ্টিতে পানির সংকটে আমের উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এবার ফলন কমবে অন্যবারের তুলনায়। আকারেও ছোট হচ্ছে আম। অনাবৃষ্টিতে গরমে বাতাসে ঝড়ে গেছে আমের মুকুল। ঠিকঠাক সার ও পানি দিতে না পারায় পর্যাপ্ত আমের ফলন হয়নি এ বছর।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ