প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিচু এলাকা, ভূমিধসের আশঙ্কা
টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু অঞ্চল। নগরীর সড়কগুলোয়ও পানি জমতে দেখা গেছে। কক্সবাজারেই প্লাবিত হয়েছে নয়টি উপজেলার দুই শতাধিক এলাকা, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
এছাড়াও বান্দরবানে টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়ক তলিয়ে থাকায় গতকাল দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে আলীকদম উপজেলা। টানা বর্ষণে এসব অঞ্চলে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে আরও দুই দিন ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন (১৮ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩৩.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগে আবহাওয়া অফিস জানায়, ১৭ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার বিরতিহীনভাবে বৃষ্টি হলেও বেলা ১১টার পর থেকে আরও বৃষ্টি শুরু হয়।
পতেঙ্গা নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চাঁদগাঁও বাদুরতলা, চকবাজার, আকবরশাহ, ২ নম্বর গেট, রহমান নগর, চকবাজার, ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে । এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৬টা-৯টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আলী আকবর খান জানান, আগামী পাঁচদিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল। এর প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে টানা বর্ষণে নগরীতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেড়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরীর ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে । পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে। টানা বৃষ্টিতে গতকাল সকাল থেকে নগরীর লালখান বাজার টাংকির পাহাড়ের পাদদেশ ছেড়ে কিছু বাসিন্দা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘ তৈরি হচ্ছে। যার কারণে এমন ভারি বর্ষণ আরও অন্তত দুই দিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বর্ষণে কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। মাসের শুরুতে (১ আগস্ট) অবিরাম বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে