শুধু ঘরই নয়, নতুন জীবন পেলেন বগুড়ার হাজারো পরিবার
ঘরের আঙিনায় বসে গল্পে মজেছেন নারীরা। শিশুরা খেলা করছে। সেই সঙ্গে জীবিকার তাগিদে অনেকেই আপন মনে বিভিন্ন কাজ করছেন। তাদের চোখে-মুখে নেই দুশ্চিন্তার কোনো ছাপ। অথচ নিজের একটা বাড়িতে বসবাস করাটা তাদের কাছে ছিল দুঃস্বপ্ন। কিন্তু আজ নিজের ঘরেই সুখের সংসার করছেন তারা। খুঁজে পেয়েছেন নিজের স্বপ্নের ঠিকানাও।
সম্প্রতি এমন দৃশ্যের দেখা মেলে বগুড়া সদরের কদমতলী গ্রামে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বদলে গেছে তাদের জীবন ও জীবিকা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পাওয়া ঘরে বসবাস করছেন তারা।
৬০ বছরের সুলতান রহমান, পেশায় তিনি কাঠমিস্ত্রী। বছর দুয়েক আগে তার নিজের কোনো ঠিকানা ছিল না। ছিল না নিজের জমিও। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন কদমতলী গ্রামে তার এক আত্মীয়র বাড়িতে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সেখানে উঠেন তিনি। নিজের একটা ঘর হওয়ায় এখন জীবিকার জন্য বেছে নেয়া কাজে মনযোগী হয়েছেন তিনি। এর ফলে তার সংসারেও এসেছে স্বচ্ছলতা।
সুলতান জানান, অভাবে ঘর-বাড়ি ও জমি হারানোর পর কখনই তিনি ভাবেননি তার নিজের একটা ঠিকানা হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তার জীবনের পরিবর্তন ঘটেছে। সবমিলিয়ে সুখেই কাটছে তার।
৫৫ বছরের মর্জিনা বেগম, তিনিও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সুবিধাভোগী। বর্তমানে তিনি সপরিবারে কদমতলী গ্রামে বসবাস করছেন। এক সময় ভূমি ও গৃহহীন ছিলেন তিনি। তখন তার দিন কাটতো অন্যের সহযোগিতায়। নিজের কোনো বাড়ি-ঘর ছিল না তার। সদরের বানদিঘী এলাকায় এক বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তবে মাস ছয়েক আগে অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তার স্বামী ওসমান। এখন সংসারের হাল ধরেছেন মর্জিনা।
মর্জিনা বেগম জানান, বাড়িতে ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালন করেন। এতে সংসারে বাড়তি আয় আসে। একইসঙ্গে তিনি অন্যের বাড়িতেও কাজ করে আয় করছেন। তার স্বামী অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এতে সাময়িক অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও নিজের বাড়ি থাকায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। এখন তারা অনেক ভালো আছেন। দিন শেষে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।
শুধু সুলতান ও মর্জিনার জীবনেই পরিবর্তন আসেনি। উপহারের ঘর পেয়ে এমন পরিবর্তন এসেছে এ জেলার হাজারো পরিবারের। জমি ও গৃহ না থাকা সেই পরিবারগুলো এখন নিজ বাড়িতেই সংসার সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের সন্তানরাও এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বিনামূল্যে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন করেন।
এরপরই বগুড়ায় ১৮৬টি পরিবারের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে সদরে ১৩১, শেরপুরে ৪৫ ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১০ পরিবার রয়েছে। এর মাধ্যমে এ জেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে বগুড়ায় মোট ৫০০৫ পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিনামূল্যে দেয়া বাড়িগুলো গৃহ ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে। এতে তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।
তিনি আরও বলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যেতেই হবে। এদেশের মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। প্রত্যেক মানুষের জীবন সুন্দর হবে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তা বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় বগুড়াসহ দেশের ২৬ জেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে