কার্যকর ও প্রাণবন্ত সংসদের প্রত্যাশা
জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের সংখ্যায় ভারসাম্য থাকলে সংসদে আইন-প্রণয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক হয়, আলোচনা হয়, সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এটাই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া হয়; কিন্তু এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সব আসনেও জিততে পারে, এক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। অতএব, কোনো নির্বাচনে বিরোধী দল শূন্য সংসদও হতে পারে।
যদিও বলা হতে পারে, এটা অসম্ভব। সমাজে যেহেতু ভিন্ন মতের মানুষ থাকবেই। অতএব, একটি দলের প্রার্থীরা সব আসনে জিততে পারে না কিংবা কোনো দেশেই এ নজির নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সংসদের প্রতিটি আসনের জন্য পৃথকভাবে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অতএব, কোনো দল সব আসনে প্রার্থী দিলে এবং সব প্রার্থী জিতে এলে সেটা অভূতপূর্ব হতে পারে, অস্বাভাবিক নয়।
৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৯৮ আসনের সর্বশেষ ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জিতেছেন ২২২টি আসন। নির্বাচনের আগে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ময়মনসিং-৩ আসনের নির্বাচনে সহিংসতার কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। ১৩ জানুয়ারি ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ শেষে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
এ দুটি আসনে নৌকার প্রার্থীরা জিতলে আওয়ামী লীগের আসনসংখ্যা হবে ২২৪। যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেতে, তাহলে সংসদে স্বতন্ত্র সদস্যের সংখ্যা হবে ৬৪ জন। এবারের জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সদস্যরা প্রকৃত অর্থে স্বতন্ত্র নন। তারা সবাই আওয়ামী লীগেরই নেতা কিংবা সক্রিয় সমর্থক। দলের মনোনয়ন না পেয়ে ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন। ফলে এই স্বতন্ত্র সদস্যরাও মূলত আওয়ামী লীগেরই।
এর বাইরে জাতীয় পার্টির সদস্যরা পেয়েছে ১১টি আসন। এ ছাড়া অন্যান্য দলের তিন সদস্য জয়ী হয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের সদস্য হবেন এই ১৪ জন। সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাইলে সংখ্যা একটা ফ্যাক্টর হতে পারে; কিন্তু এর চেয়ে বড় ইচ্ছাশক্তি। যদি স্বল্পসংখ্যক বিরোধী দলের সদস্যরাও চান, তাহলে জাতীয় ইস্যুতে গঠনমূলক সমালোচনা, বিতর্কের মধ্য দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেন।
এক্ষেত্রে সরকারি দলকেও বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনা, বক্তব্য শুনতে হবে। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলে তা গ্রহণ করতে হবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যা খুশি আইন পাস না করে জনস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, নাগরিক নিরাপত্তার মতো জরুরি জনগুরুত্ববিষয়ক কোনো প্রসঙ্গ উঠলে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হয় সাধারণ ভোটারদের ভোটে। ফলে সব সময় বড় সংখ্যায় বিরোধী দল থাকবে, কিংবা সরকারি ও বিরোধী দলের আসনসংখ্যায় ভারসাম্য থাকবে, তা বলা যাবে না। এবারও সংসদে আসনসংখ্যার যে চিত্র, সেটাকেও অস্বাভাবিক বিবেচনা করার সুযোগ নেই বরং যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেই সংসদ সদস্যরাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভবে পালনের মাধ্যমে সংসদকে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করবেন–এটাই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে