রমজানেও থাকছে না গ্যাস, ভোগান্তিতে গৃহিণীরা

রমজান মাসেও আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় বিপাকে রাজধানীর অনেক এলাকার গৃহিণীরা। বিশেষ করে ইফতার ও সেহরির আগে গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকায় রান্না ব্যাহত হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের দাবি, সরবরাহ ঘাটতি, আবাসিকের গ্যাস বিদ্যুতে স্থানান্তর, পুরোনো লাইনসহ নানা কারণে গ্যাসের সংকট চলছে। আর সংকট মোকাবিলায় ডেস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোসহ সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
মগবাজার, রামপুরা, বাসাবো, তেঁজগাও, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, সূত্রাপুরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গৃহিণীদের অভিযোগ, দুপুরের আগেই কমে আসে গ্যাসের চাপ। বিকেল না গড়াতেই সংকট তীব্র হয়। ধীরগতিতে চুলা জ্বলায় রান্নায় ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি সময়। কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসই থাকছে না।
গত মাস ও শীতকালজুড়ে তীব্র সংকট ছিল গ্যাসের। তবে রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা হলেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
বেশিরভাগ গৃহিণী বলছেন, শীতকালের তুলনায় গ্যাস সংকটের তীব্রতা কিছুটা কমলেও রমজানের শুরু থেকে সেহরি ও ইফতারি তৈরির সময়ই গ্যাস থাকছে না। আসলেও চাপ খুবই কম। সময়মতো ইফতারি-সেহরি তৈরি করতে না পেরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তেজগাঁও পশ্চিম তেজকুনিপাড়ার ফিরোজা বেগম বলেন, ‘সারাদিন রোজা রেখে দুপুরের পর ইফতারি তৈরির সঙ্গে রাতের রান্না করতে গিয়ে দেখি, গ্যাস নেই। থাকলেও চাপ এতোটাই কম যে, রান্না করতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগে। সময়মতো শেষ করতে না পেরে কোনো কোনো দিন বাইরে থেকে অস্বাস্থ্যকর ইফতারি কেনা লাগে। সেহরির সময়ও একই অবস্থা।’
একই এলাকার খাদিজা বেগম বলেন, ‘সকালের দিকে গ্যাস আসে অল্প। এরপর দুপুর গড়াতে না গড়াতে চাপ কমে আসে গ্যাসের। এর পর থেকে যখন রান্নার সময়, তখনই গ্যাস চলে যায়।’
পান্থপথ বসুন্ধরা সিটি সংলগ্ন এলাকার লিজা আক্তারের অভিযোগ, ‘প্রতি মাসে বিল ঠিকই দিচ্ছি; কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না। রোজার মাসে সময়মতো গ্যাস পাওয়া খুবই প্রয়োজন। শীতের সময় সমস্যা তো থাকেই। এবার শীত শেষে রোজার মাসেও ইফতারি, সেহরির রান্না ঠিক সময়ে শেষ করতে পারছি না।’
বসুন্ধরা সিটি সংলগ্ন গার্ডেন রোডের খুকি আক্তার চাকরি করেন বেসরকারি হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো চাকরির ধরাবাঁধা সময়। গ্যাস আসে সকালের দিকে, তখন আমি ডিউটিতে থাকি। আগে রান্না করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। ইফতারের আগে দুপুরে বাসায় এসে রান্না করতে গিয়ে গ্যাস পাই না। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার আনতে হয়।’
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘গ্যাস সংকট শুধু এখনকার নয়, অনেক দিনেরই সমস্যা। বিশেষ করে আবাসিকে। পেট্রোবাংলা যে গ্যাস সরবরাহ করে সেটি শিল্প, বাণিজ্য, সিএনজি, বিদ্যুৎ, আর কারখানাসহ আবাসিকে দেয়। সবদিকে যখন দেয়া হয় তখন আবাসিকের চাপ কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরাও অভিযোগ পেয়েছি, সকালে গ্যাস থাকে না, অনেক রাতে আসে। তবে কিছু এলাকায় পুরোনো লাইন থাকায় সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মার্চ থেকে আবাসিক খাতের গ্যাস দিতে হচ্ছে বিদ্যুতে। তিতাসের চাহিদা অনুসারেও গ্যাস মিলছে না। চাহিদা রয়েছে দিনে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে পেট্রোবাংলা থেকে মিলছে এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যা আবার বিভিন্ন খাতে সরবরাহ করতে হচ্ছে। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘাটতি রয়েছে।’
আবাসিক খাতে গ্যাস সংকট কাটাতে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে